যে দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এক হাজার ১৭১ জন। সেখানে একটি গ্রামে থাকে মাত্র চার জন মানুষ। ঘটনাটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। গ্রামটির নাম উমানাথপুর। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নে গ্রামটির অবস্থান। গ্রামের একমাত্র বাড়িটি ২৫ শতক জমির ওপর। রয়েছে দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর, পুকুর ও একটি টয়লেট ছাড়াও কিছু গাছগাছালি। গ্রামটির অস্তিত্ব সম্পর্কে স্থানীয় আশপাশের কয়েক মানুষ ছাড়া জানেন না বেশিরভাগ লোকজন। বিচিত্র এই গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে ভূমি মানচিত্রে। উমানাথপুর নামে রয়েছে আলাদা মৌজাও। এই গ্রামের জেএল নম্বর ১১৬।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উমানাথপুর গ্রাম। দলিল লেখক সিরাজুল সরকার (৭০) এই গ্রামের বাড়িটির একমাত্র মালিক। অন্যের জমির আইল দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। বাড়ি ঘিরেই গঠিত হয়েছে উমানাথপুর গ্রাম। এর পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ। আশপাশের গ্রামের মধ্যে রয়েছে উত্তরে রামগোবিন্দপুর, দক্ষিণে হরিপুর, পূর্বে উদয়রামপুর এবং পশ্চিমে রামগোবিন্দপুর ও হরিপুর গ্রাম।
হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি বাড়ি নিয়ে একটি গ্রাম। এটি আজব ঘটনা। প্রথমে খবর শুনে অনেকে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু এটি সত্য।’
উদয় রামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি গ্রামটি। প্রায় একই অবস্থা আমার নিজ গ্রাম উদয় রামপুরের। এখানেও চারটি পরিবারের বসবাস। এতে জনসংখ্যা প্রায় অর্ধশত।’
জমির কাগজপত্রে এই গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানালেন রামগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক পারভেজ। তিনি বলেন, ‘গ্রামের একমাত্র বাড়িটিতে যাতায়াতের রাস্তাটি প্রশস্ত করে দিলে বাড়ির লোকজনের চলাচলে সুবিধা হতো। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় অনেকে সেখানে বাড়ি করতে চায় না।’
উমানাথপুর গ্রামের একমাত্র বাসিন্দা সিরাজুল সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য রমজান আলী সরকার ও তার পূর্বপুরুষরা এই বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি করেছিলেন। গ্রামের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৭ একর। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি পরিবার নিয়ে এই বাড়িতে থাকি। সম্প্রতি আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবারের মোট সদস্য বর্তমানে চার জন। এর মধ্যে নাতি ছাড়া আমি, আমার স্ত্রী ও এক পুত্রবধূ আছে। তার মধ্যে আমরা তিন জন ভোটার।’
তিনি বলেন, ‘আমার বোনেরা বাড়ির পেছনে অন্য গ্রামে বসবাস করে। একটি মহল আমাকে এখান থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। এ কারণে দেড় বছর আগে থানায় জিডি করেছি। এখনও হুমকি পাচ্ছি।’
রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলী ফকির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই একটি বাড়ি নিয়ে এই গ্রাম। তবে কীভাবে এই গ্রামের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উমানাথপুর গ্রামটি পরিদর্শন করে সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রামে ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার উন্নয়নে কাজ করার উদ্যোগ নেবো।’