মাদারীপুরের পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের ওপর নির্মিত ২৯টি স্লুইসগেট অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বছরের পর বছর এগুলো পড়ে থাকলেও মেরামত কিংবা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতার আগে এবং ব্রিটিশ আমলে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ এবং চাষাবাদের সুবিধার্থে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে স্লুইসগেটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। পাশাপাশি স্থান নির্বাচনে ত্রুটি থাকায় এগুলো কৃষকের কাজেও আসেনি। বর্তমানে ২৯টি স্লুইসগেট অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে খাল ও নদীর তীব্র স্রোতের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছেন স্থানীয় কৃষকরা। পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, স্লুইসগেটগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও মেরামতের অযোগ্য। কয়েকটি আবার নদীগর্ভে চলে গেছে। তদারকির অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে স্লুইসগেটগুলো। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩৪টি স্লুইসগেট রয়েছে। এর মধ্যে কালকিনি উপজেলায় ২৯টি, সদর উপজেলায় তিনটি ও রাজৈর উপজেলায় দুটি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৯টি পুরোপুরি অকেজো। বাকি পাঁচটি কোনোমতে দাঁড়িয়ে থাকলেও কাজে আসছে না।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, কালকিনি উপজেলায় ২৯টি। এগুলো এফসিডিআই উপ-প্রকল্পের অধীনে নির্মিত। এর মধ্যে তিনটি সচল, বাকিগুলো অকেজো। সদর উপজেলায় তিনটির মধ্যে একটি এবং রাজৈর উপজেলার দুটির মধ্যে একটি সচল, বাকিগুলো অকেজো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম খালের ওপর নির্মিত স্লুইসগেটটি নির্মাণ করা হয় ব্রিটিশ আমলে। বছরের পর বছর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি অকেজো পড়ে থাকায় কোনও কাজে আসছে না স্থানীয়দের।
একই অবস্থা সদর উপজেলার কুমার নদের ওপর নির্মিত মোস্তফাপুর স্লুইসগেটের। জলকপাটের পুরো অংশে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘাস আর লতাপাতায় ছেয়ে গেছে চারপাশ।
এছাড়া সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের চোকদার ব্রিজের কাছের স্লুইসগেটের অবস্থাও করুণ। পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে পানিপ্রবাহ।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার ইমাম বলেন, ‘স্লুইসগেটগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। এগুলো স্থানীয়দের কোনও উপকারে আসছে না। এগুলো মেরামত করে রক্ষণাবেক্ষণ করলে হয়তো কাজে আসবে।’
চোকদার ব্রিজ এলাকার কৃষক মতিন মুন্সী বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশের স্লুইসগেটটি সচল থাকলে কৃষকদের কোনও কাজে আসছে না। বন্যার সময় কৃষিজমি ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে যায়। এটি মেরামতের দাবি জানাই।’
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হাসান কবির বলেন, ‘আমরা অকেজো স্লুইসগেটগুলো মেরামতের লক্ষ্যে জরিপ কার্যক্রম শুরু করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্লুইসগেটগুলো মেরামত করা হবে। অনেকগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। সেগুলো মেরামত করলেও কাজ আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’