৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সমুদ্রে গিয়ে দুই দিনে ৭৫ মণ ইলিশ ধরেছেন একটি মাছ ধরা ট্রলারের জেলেরা। গত কয়েকদিন ধরে ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বরগুনার জেলেরা। হঠাৎ এক ট্রলারে একসঙ্গে এত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় আশার আলো দেখছেন তারা।
জেলেরা জানান, ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগরসহ বরগুনার তিনটি নদী বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রায় প্রতিদিন ইলিশ ধরার জন্য জাল ফেলছেন জেলেরা। ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। ট্রলারের জ্বালানি ও খরচ না উঠায় কেউ কেউ নদীতে জাল ফেলা বন্ধ রেখেছিলেন।
এরই মধ্যে পাথরঘাটার এফবি সাফওয়ান নামে একটি ট্রলারে ৭৫ মণ ইলিশ ধরা পড়ে। শনিবার ও রবিবার মাছগুলো ধরা পড়ে। সোমবার সন্ধ্যায় মাছগুলো নিয়ে পাথরঘাটা ঘাটে আসেন জেলেরা। ট্রলার মালিককে দেখানোর পর সোমবার রাতে মাছগুলো বাগেরহাটের মৎস্য আড়তে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে ১৮ লাখ ৫০০ টাকায় মাছগুলো বিক্রি হয়।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুরে এফবি সাফওয়ান ট্রলারের মালিক মোস্তফা গোলাম কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মোস্তফা গোলাম কবির পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
এফবি সাফওয়ান ট্রলারের মাঝি মো. মহসিন মিয়া বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার এক সপ্তাহের বাজার সদাই নিয়ে আমরা গভীর সমুদ্রে রওনা হই। বঙ্গোপসাগরের শূন্য পয়েন্টে নোঙর করে জাল ফেলি শনিবার। সাগরে জাল ফেলার পর ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। শনিবার ও রবিবার দুই দিনে এত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে কল্পনাও করিনি। পরে মালিকের সঙ্গে কথা বলে ট্রলার নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে ফিরে আসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা মিলছিল না। আমরা প্রথম ইলিশবোঝাই ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরেছি। অন্য ট্রলারের জেলেরা আমাদের মাছ দেখে অবাক হয়েছেন।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, ‘ভরা মৌসুম হলেও ইলিশের তেমন দেখা মিলছিল না। এরই মধ্যে আমার ট্রলারের জেলেরা ট্রলারবোঝাই ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন। এটি জেলেদের জন্য আনন্দের খবর। আশা করছি, এখন থেকে ইলিশ ধরা পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার রাতেই মাছগুলো বিক্রির জন্য বাগেরহাটের আড়তে পাঠিয়ে দিয়েছি। মঙ্গলবার সকালে ১৮ লাখ ৫০০ টাকায় পাইকারিতে মাছগুলো বিক্রি হয়েছে।’
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘জেলেরা জাল ফেলেও ইলিশ না পেয়ে ফিরে আসায় সমিতির অধিকাংশ ট্রলার মালিক হতাশ হয়েছেন। মাছ না পাওয়ায় জেলেদের কষ্টে দিন কাটছে। এরই মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের ট্রলারের জেলেদের জালে ৭৫ মণ ইলিশ ধরা পড়ে। এটি খুশির খবর। মনে হচ্ছে মাছ ধরা পড়তে শুরু করেছে। জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়লে ধারদেনা কাটিয়ে উঠতে পারবো আমরা।’
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘ গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন করায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এখন গভীর সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এসব ইলিশের সাইজও বেশ বড়। তবে উপকূলের কাছাকাছি এখন অনেকটা কম পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।’