পানির সংকটে ভুগছেন যশোর সদরের ফতেপুর ইউনিয়নের বাউলিয়ার গুচ্ছগ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। একই সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। নলকূপ না থাকায় প্রতিদিন পানির জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরখানেক আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠেন বাউলিয়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। দুই ভাগে এখানে ৩৪টি ঘর তুলে দিয়েছিল সরকার। অর্থাৎ ৩৪টি পরিবার এখানে বসবাস করছে। ঘরগুলো হস্তান্তরের সময় (২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি) থেকে ২০ পরিবারের সুপেয় পানির জন্য তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি সোলার সাবমারসিবল পাম্প বসানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই সেটি অকেজো। বাসিন্দাদের কোনও উপকারে আসেনি পাম্পটি।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নিরাপদ পানির অভাব, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় খানাখন্দে পচা পানির দুর্গন্ধ এমনকি ওই এলাকায় সরকারি কোনও কবরস্থান না থাকার ফলে বাসিন্দাদের দাফন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রকল্পের পূর্ব অংশে রয়েছে ১৪টি ঘর। অপর পাশে ২০টি। পূর্ব পাশের ১৪ পরিবারের জন্য একই জায়গায় একটি অগভীর ও একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। কিন্তু গভীর নলকূপটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানি ওঠে না। অপর নলকূপের পানিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। আরেকটি গভীর নলকূপ সেখানকার একজন বাসিন্দা বাড়ির ভেতরে স্থাপন করেছেন। সেটি অন্যদের ব্যবহার করতে দেন না বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।
প্রকল্পের বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, ‘একটি গভীর নলকূপ শেফালি নামে একজন বাসিন্দা তার বাড়ির ভেতরে স্থাপন করেছেন। সেটি থেকে কাউকে পানি নিতে দেওয়া হয় না।’
শেফালি দাবি করেন, ‘ওই নলকূপটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে অফিস থেকে যোগাযোগ করে বসিয়েছেন। এজন্য কাউকে পানি নিতে দেন না।’
এখানকার বাসিন্দা রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, ‘এই জমিতে আগে খাল ছিল। বাপ-দাদারা এখানে সরকারি জমিতে থাকতো। পরে আমার নামেও একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখানে থাকার জায়গা হলেও পানির সংকট রয়েছে। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য দূরে স্কুল; আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের জন্য নেই মসজিদ। এখানে সরকারি কবরস্থান নেই। কেউ মারা গেলে কোথায় দাফন করা হবে, তা আমাদের জানা নেই।’
কবরস্থানের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দা বিধবা নিহারুন নেসা (৭০)। সংশ্লিষ্টদের কাছে তিনি দাবি জানান, এখানকার বাসিন্দাদের জন্য যেন একটি কবরস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। কেননা এই গ্রামে দাফনের জন্য প্রায় সবার পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে।
অপর পাড়ার বাসিন্দা, যাদের জন্য সোলার মারসিবল পাম্প স্থাপন করা হয়েছে তারা জানান, প্রথমদিন অল্প পরিমাণ পানি উঠেছিল। কিন্তু পরে আর পানি ওঠেনি। পাম্পটি কোনও কাজে আসছে না তাদের।
দিনমনি পাড়ই বলেন, ‘সোলার পাম্প থেকে একদিনও পানি নিতে পারিনি। যন্ত্রাংশ খুলে রেখেছে সংশ্লিষ্টরা। এটি এখন কোনও কাজে আসে না।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ইজিবাইকচালক বিপুল সরকার বলেন, ‘প্রথমদিন পাম্পে অল্প পানি উঠেছিল। তারপর থেকে পাম্পটি বন্ধ। এখানকার বাসিন্দাদের কোনও কাজে আসে না সোলার পাম্পটি। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’
এখানকার বাসিন্দাদের দুর্দশার বিষয়ে কথা হয় ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর (সংরক্ষিত) ওয়ার্ডের সদস্য হাসিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন কী করতে হবে তাই বলেন’ উল্টো এই প্রতিনিধির কাছে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান হাসিনা বেগম।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়নের হামিদপুর মাঠপাড়া এলাকায় একটি কবরস্থান আছে। ওখানের বাসিন্দাদের কেউ মারা গেলে ওই কবরস্থানে দাফন করা যাবে।’
পানির সংকট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে ওখানের বাসিন্দারা এসব বিষয়ে কিছুই বলেননি। তবে খুব শিগগিরই সেখানে আমি যাবো। এরপর সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি নলকূপ নিজের দাবি করে পানি না দেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, যশোরে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে এক হাজার ১৮১টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। তৃতীয় পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬১০টি ঘর। এর মধ্যে ৩১৮টি ঘর ইতোমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকি ঘরগুলোর নির্মাণকাজ চলছে বলে জানিয়েছেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান।