রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মান্নান গাছির খেয়াঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এতে ওই এলাকার ৩০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। পদ্মা নদীর ক্যানালের ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সঙ্গে উজানচর ইউনিয়নের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। বর্তমানে নৌকাই মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা।
সরজমিনে দেখা গেছে, মই দিয়ে সেতুতে উঠে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভয়ের কারণে পাশে খেয়া নৌকা দিয়ে পার হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মান্নান গাছির খেয়াঘাট দিয়ে ওই এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন। খেয়াঘাটের দুই পাশে একাধিক হাটবাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ যেমন স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিয়মিত ফরিদপুরে যাতায়াত করে থাকেন, তেমনি ওপারের মানুষও লেখাপড়া-বাজার ঘাটসহ নানা প্রয়োজনে গোয়ালন্দে এসে থাকেন। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দুই অঞ্চলের মানুষ সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকায় সেতুটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। দ্বিতীয় দফায় পুনরায় সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৪ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিনেও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।
ক্যানালের ওপারের ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী মোবারক খাঁ বলেন, ‘এলাকায় কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীরা গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর দাখিল মাদ্রাসা, সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামতলা হাই স্কুলে লেখাপড়া করে। সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
মই বেয়ে সেতু পার হওয়া কাউছার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রতিদিন আমার ৭-৮ বার ওপারে যেতে হয়। আমি আনন্দ বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করি। নৌকায় প্রতিবার পার হতে পাঁচ টাকা করে দিতে হয়। প্রতিদিন ৩০-৪০ টাকা দিয়ে নৌকায় পার হওয়া সম্ভব নয়, এ কারণে মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছি।’
মান্নান গাছির খেয়া ঘাটের নৌকার মাঝি আ. সাত্তার খাঁ বলেন, ‘নৌকায় শুধু মানুষ যাতায়াত করে। ভারী কোনও পণ্য নেওয়া সম্ভব হয় না। রাতে নৌকা দিয়ে পারাপার করে জরুরি রোগী হাসাপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। অনেক সময় রোগী খুব সংকটাপন্ন হয়ে যান।’
উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম মৃধা বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে সেতুর কাজ চলছে। মাঝে মাঝে দেখি কাজ চলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। আমরা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর কাছে বলেছি, তিনি এ ব্যাপারে কয়েকবার উপজেলা প্রকৌশলীকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে হাজার হাজার মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণকাজ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়। পরে আবার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। ইঞ্জিনিয়ারসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, ‘মান্নান গাছির সেতুর কাজ বন্ধ থাকার পর কয়েকদিন খুব ভালোই চলছিল। হঠাৎ বিল সংক্রান্ত ঝামেলার জন্য কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আমরা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, বিল সংক্রান্ত ঝামেলা খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের কাজে কোনও গাফিলতি নেই। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজে কোনও অনিয়ম এবং কাজ না করলে আমরা সেই ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। আশা করি, দ্রুত কাজ শুরু হবে এবং মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।’
এদিকে, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নকাজ বন্ধ হয়ে থাকা এবং যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমানের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।