প্রকল্পের নির্ধারিত সময় শেষে এক বছর বাড়িয়ে দেড় বছরেও পানি সরবরাহ শুরু করতে পারেনি চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার’। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষ দিকে উদ্বোধনের পর পানি সরবরাহ করা যেতে পারে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ওয়াসা সূত্র বলছে, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩৬ কোটি টাকা। মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে শুরুতে ভূমি নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়। এজন্য তিন বছর আটকে যায় কাজ। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় নির্মাণকাজ। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই মাসেই ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা করা হয়। কাজ শেষে সময় ধরা হয় ২০২৪ সালের জুনে। কিন্তু তাও শেষ হয়নি। হিসাবে ৯৫৯ কোটি ব্যয় বেড়েছে। পুরো ব্যয়ের মধ্যে ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে এক হাজার ১৫০ কোটি ৬৫ লাখ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে দিয়েছে ২০ কোটি টাকা। এখন আশার খবর হলো, গত অক্টোবর মাসে কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনও পানি সরবরাহ শুরু করা যায়নি। শিগগিরই পানি সরবরাহ শুরু করা যাবে বলে আশাবাদী চট্টগ্রাম ওয়াসা।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ‘অক্টোবর মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭২ ঘণ্টা চূড়ান্ত কমিশনিংয়ের (ট্রায়াল রান) কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত রবিবার দুপুর ২টা থেকে ট্রায়াল রান শুরু হয় চলে বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত। কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি। চূড়ান্ত ট্রায়াল রানের আগে গত এক মাস ধরে প্রাথমিক ট্রায়াল রান চলছিল। এখন কর্তৃপক্ষ চাইলে যেকোনো দিন প্রকল্পটি উদ্বোধন করতে পারবে।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী জ্যৈষ্ঠপুরার ভান্ডালজুড়ি পাহাড়ি এলাকায় ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গায় জুড়ে গড়ে উঠেছে ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার। এখান থেকে দৈনিক ছয় লাখ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে। এখান থেকে বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, পটিয়া উপজেলা এবং কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল, সিইউএফএল এবং কাফকো শিল্পাঞ্চলে পানি সরবরাহের কথা রয়েছে। এক হাজার ৩৬ কোটি টাকায় শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হয়েছে এক হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায়। ওয়াসার অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে। লেগেছে বেশি সময়। প্রকল্পের অধীনে পানি সরবরাহ প্রকল্পে ১৩০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইন রয়েছে। পাইপগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে কোথাও কোনও লিকেজ পাওয়া যায়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষের দিক থেকে পানি সরবরাহ শুরু হবে।
প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘প্রকল্প চালু হলে দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে। আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে পানির সংযোগ দেওয়া হবে। প্রকল্প থেকে শিল্পাঞ্চলে ৮০ ভাগ এবং আবাসিকের গ্রাহকদের জন্য ২০ ভাগ পানি সরবরাহ করা হবে।’
প্রকল্প থেকে ছোট-বড় ১৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানে দৈনিক চার কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট আছে। এ ছাড়া আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে দেওয়া হবে দুই কোটি লিটার পানি। পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় ৫ একর এবং আনোয়ারার দৌলতপুরে ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় দুটি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে ১১৩ কিলোমিটার পাইপলাইন।’
ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের চূড়ান্ত ট্রায়াল রানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই এর উদ্বোধন করা হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলমান আছে। পানি সরবরাহের জন্য কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকোসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চল এবং ৯০০ জন আবাসিকের গ্রাহক সংযোগ পেতে আবেদন করেছিলেন। ইতোমধ্যে আমরা ৭০০ গ্রাহককে সংযোগ দিয়েছি।’