এক মেশিনেই তৈরি হচ্ছে রসগোল্লা-চমচম-কালোজাম
বাংলাদেশ

এক মেশিনেই তৈরি হচ্ছে রসগোল্লা-চমচম-কালোজাম

সাশ্রয় হচ্ছে সময় ও অর্থ, কমেছে শ্রমিকের ব্যবহার। পরিশ্রম নেই বললেই চলে। এখন স্বয়ংক্রিয় মেশিনে হাতের স্পর্শ ছাড়াই তৈরি হচ্ছে রসগোল্লা, চমচম ও কালোজামসহ বিভিন্ন মিষ্টি। এসব মিষ্টি তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার মিষ্টি ব্যবসায়ী হারান চন্দ্র অধিকারী।

বৈদ্যুতিক মেশিনে মিষ্টি তৈরির কাঁচামাল ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। হাতের স্পর্শ ছাড়াই মেশিন থেকে বের হয়ে আসছে বিভিন্ন আকারের মিষ্টি। রসগোল্লা, চমচম ও কালোজামসহ বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি হচ্ছে এক মেশিনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪২ বছর ধরে মিষ্টি তৈরি ও বিক্রি করে আসছেন হারান চন্দ্র অধিকারী। আলমডাঙ্গার চারতলা মোড়ে নিজস্ব মালিকানাধীন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান অধিকারী মিষ্টান্ন ভান্ডার। ‘হারানের মিষ্টির দোকান’ নামেই এলাকায় বেশি পরিচিত এই মিষ্টান্ন ভান্ডার।

অধিকারী মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় কড়াইয়ে ছানা বানানোর জন্য দুধ ফোটানো হচ্ছে। ছানা হয়ে গেলে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে মেশিনে। মেশিনে ছানা দেওয়ার পরই তা বিভিন্ন সাইজ হয়ে মিষ্টি আকারে নিচে রাখা ট্রেতে পড়ছে। এরপর ট্রে ধরে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে কড়াইয়ে। কড়াই থেকে নামানোর পর মিষ্টিগুলো ঠান্ডা করে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। মূলত যে ধরনের ছানা দেওয়া হচ্ছে সে ধরনের মিষ্টি মেশিন থেকে বের হচ্ছে।

মূলত যে ধরনের ছানা দেওয়া হচ্ছে সে ধরনের মিষ্টি মেশিন থেকে বের হচ্ছে

হারান চন্দ্র অধিকারী জানান, চার লাখ টাকা দিয়ে ভারত থেকে মিষ্টি তৈরির স্বয়ংক্রিয় মেশিনটি এনেছেন তিনি। মেশিনে মিষ্টি তৈরির ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। কমেছে শ্রমিকের ব্যবহার। মিষ্টি তৈরিতে খরচ কম হওয়ায় কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। এতে বেচাকেনা বেড়েছে তার।

হারান চন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘মেশিনে মিষ্টি তৈরি করলেও স্বাদ ও মান আগের মতোই রয়েছে। হাতের স্পর্শ ছাড়াই মিষ্টি তৈরি ইতিবাচক হওয়ায় বেশ সাড়া পাচ্ছি। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা বেশি পরিমাণ কিনছেন। আগে দিনে পাঁচ-ছয় হাজার টাকার মিষ্টি বিক্রি হতো। এখন আট-নয় হাজার টাকার মিষ্টি বিক্রি হয়।’ 

কড়াই থেকে নামানোর পর মিষ্টিগুলো ঠান্ডা করে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হচ্ছে

এদিকে, স্বয়ংক্রিয় মেশিনে মিষ্টি তৈরি হওয়ায় পরিশ্রম কমেছে শ্রমিকদের। মিষ্টি তৈরিতে কম সময় লাগছে তাদের। তবে আগের মতোই মজুরি পেয়ে খুশি কারিগররা।

অধিকারী মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারিগর সোহান ঘোষ বলেন, ‘আগে আমরা যেখানে সারাদিন পরিশ্রম করতাম, এখন চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারছি। আমাদের পরিশ্রম কমেছে, চাহিদা অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যেই মিষ্টি বেশি তৈরি করতে পারছি। শ্রমিকও কম লাগছে। আগে ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করতো, এখন চার-পাঁচ জন শ্রমিক কাজ করেন। তবে মজুরি আগের মতোই পাচ্ছি।’

মেশিনে মিষ্টি তৈরির ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে

বাজার ঘুরে দেখা যায়, জেলার অন্যান্য মিষ্টি দোকানে যেসব মিষ্টি ২০০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা, একই মিষ্টিই হারান অধিকারী বিক্রি করছেন ৫০ টাকা কমে। অর্থাৎ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে মিষ্টি বিক্রি করছেন তিনি। 

শহরের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় মেশিনে মিষ্টি তৈরি হলেও স্বাদ আগের মতোই রয়েছে। কোনও ধরনের পরিবর্তন হয়নি। আমি মাঝেমধ্যে হারানের দোকান থেকে মিষ্টি কিনি। তার দোকানের মিষ্টির মান ও স্বাদ অনন্য।’

Source link

Related posts

চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌপথে ভাড়া নৈরাজ্য

News Desk

অগ্রিম টিকিট: ২৪ ঘণ্টা আগেই কাঁথা-বালিশ নিয়ে কমলাপুরে

News Desk

সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের প্রেস যাচ্ছে জাতীয় জাদুঘরে

News Desk

Leave a Comment