এক যুগেও হয়নি সড়ক সংস্কার, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী
বাংলাদেশ

এক যুগেও হয়নি সড়ক সংস্কার, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

সংস্কারের অভাবে বরগুনা সদর উপজেলার ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নের সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কটির ১২ কিলোমিটার অংশের বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারী ও গাড়ির যাত্রীদের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।

বরগুনা সদর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, বরগুনার মাছ বাজার ব্রিজ থেকে আপগ্রেড হয়ে ফুলঝুড়ি বাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। তবে ২০০৭ সালের সিডরের পরে একবার সংস্কার হলেও গত ১২-১৩ বছরেও হয়নি কোনও সংস্কারকাজ। যার ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের।

এলাকার ভুক্তভোগী কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন-চার বছর আগ থেকেই এই সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। সড়কজুড়ে রয়েছে ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১১টি আশ্রয়ণ প্রকল্প। সর্বশেষ সিডরের পরে সড়কটি সংস্কার করা হয়। এরপর মেরামত না করায় সড়কের অনেক স্থানে বিটুমিন ও ইট-পাথর উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নের সড়কের বরগুনা লাকুরতলা মাছ বাজার ব্রিজ থেকে আপগ্রেড হয়ে ফুলঝুড়ি পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া ও পাথর বেরিয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ও ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে।

অটোরিকশাচালক (মিশুক) রিপন খান বলেন, ‘রাস্তায় অনেক খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। যা আয় করি তার থেকে গাড়ি মেরামতেই খরচ হয়ে যায় অর্ধেক। সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সুস্থ-সবল মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় রিকশা করে এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে তাদের অবস্থা আরও কাহিল হয়ে পড়ে। যেখানে ফুলঝুড়ি থেকে বরগুনা যেতে ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগতো সেখানে এখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।’

এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দা কামাল আকন বলেন, ‘আমাদের জরুরি চিকিৎসার জন্য যেতে হলে এই সড়ক দিয়েই যেতে হয়। তবে কোনও গর্ভবতী রোগী নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে গেলে, রাস্তাতেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যাবে। তাই ওপর মহলের কাছে দাবি, যাতে আমাদের ভোগান্তি দূর করতে রাস্তাটি সংস্কার করে দেয়।’

ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা

মোটরসাইকেলচালক (রেন্ট-এ-কার) রিয়াজ হোসেন বলেন, ‘ভাঙাচোরা রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে প্রায়ই গাড়ির চাকা লিক (ছিদ্র) হয় এবং গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। ফলে সারা দিন গাড়ি চালিয়ে যা রোজগার করি, তার একটা অংশ গাড়ি মেরামত করতেই শেষ হয়ে যায়।’

১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান রাজা বলেন, ‘বদরখালী ইউনিয়নের একমাত্র সড়কটি সংস্কারের অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সড়কটির কারণে এলাকাবাসী চরম বিপদে রয়েছে। কোনও মানুষ অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা দিতে নিয়ে যেতে পারে না। কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে যেতে বা জরুরি প্রয়োজনে বরগুনা যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। জনস্বার্থে সড়কটি সংস্কার করা দরকার।’

সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী সনজীব কুমার তালুকদার বলেন, ‘সড়কটি সংস্কার করা প্রয়োজন। তবে কোনও বাজেট না থাকায় সংস্কারের কাজ হচ্ছে না। সড়ক সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং সংস্কারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।’

Source link

Related posts

শিশুদের শিক্ষা, নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আমরা বদ্ধপরিকর

News Desk

এবার ভাঙলো মাউতির বাঁধ, ডুবছে হাওরের ফসল

News Desk

দেশে করোনায় প্রাণহানি ২২ হাজার ছাড়াল

News Desk

Leave a Comment