এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
বাংলাদেশ

এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ

উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তবে সুখবর হলো দ্রুত কমতে শুরু করেছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল ৬টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। তবে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ দিনভর কমে সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ অবস্থায় জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা ও দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। 

এদিকে পানি কমতে শুরু করলেও বন্যাদুর্গত মানুষ খুবই দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকটে রয়েছেন। অনেকে ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ারও অভিযোগ করেছেন। 

এদিকে, জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগামী ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো জানায়, ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় এ সময়ে তিস্তার পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।

পাউবো জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ধরলা নদীর পানি কমে সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমে নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

গত ২৪ ঘণ্টায় পানি হ্রাসের হার অনেকটাই বেড়েছে বলে জানায় পাউবো।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, সাহেবের আলগা ও বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমে গেলেও এখনও ওই অঞ্চলের অনেক বাড়িঘরে পানি রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকার দুর্গত পরিবারের অনেকে কোনও খাদ্য সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। বন্যায় তাদের আবাদি জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর ঘুঘুমারী গ্রামের কৃষক ইসলাম মন্ডল, রোস্তম ও এখলাস জানান, তারা এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি হলেও কোনও ধরনের খাদ্য সহায়তা পাননি। কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় তারা অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

তারা আরও জানান, চরাঞ্চলে বাদাম আবাদ নষ্ট হওয়ার পর পাট চাষ করেছিলেন। এবার বন্যায় পাট পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সহযোগিতা না পেলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

বন্যায় উলিপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে আসা সমাজকর্মী ও সংগঠক মারুফ বলেন, মানুষের বাড়িঘর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনও অনেকের বাড়িতে পানি আছে। পানি পুরোপুরি নামতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগতে পারে।

মারুফ বলেন, ‘পানি নেমে যাওয়ার পর দুর্গতদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে। বাড়িঘর মেরামত আর কর্দমাক্ত পরিবেশে অনেকে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ সময় দুর্গতদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্ভোগে পড়তে পারে।’ 

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যাদুর্গতদের জন্য ৬০০ মেট্রিক টন চাল, ৩৮ লাখ টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার সিংগভাগ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গো খাদ্যের জন্য ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 

Source link

Related posts

সাতক্ষীরায় ৭ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু

News Desk

ঈদ ও বৈসাবি উৎসবে পর্যটকে মুখর রাঙামাটি

News Desk

সরকারি স্থাপনায় মশার লার্ভা পেলে ৪ গুণ জরিমানা : তাপস

News Desk

Leave a Comment