এক হাটে দিনে কোটি টাকার মরিচ বিক্রি
বাংলাদেশ

এক হাটে দিনে কোটি টাকার মরিচ বিক্রি

নীলফামারী ডোমারের পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মুছার মোড় এলাকায় পাগলীমার হাটে প্রতিদিন আট থেকে ১০ হাজার মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। এই মরিচের দাম কোটি টাকার ওপরে। মরিচ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পাগলীমার হাটে গড়ে উঠেছে শতাধিক আড়ত। বিভিন্ন জেলার ক্রেতা-বিক্রেতার আগমনে সরগরম থাকে আড়ত। এবার বেশি দামে মরিচ বিক্রি করতে পারায় খুশি চাষিরা। জেলার ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ছাড়াও পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শত শত চাষি এই হাটে মরিচ বিক্রি করেন।

জেলা কৃষি অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলা সদরে ২৯০, সৈয়দপুরে ২৫, ডোমারে ৭৮০, ডিমলায় ৫৪০, জলঢাকায় ৮০ ও কিশোরগঞ্জে ৮৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। আবাদি জমির পরিমাণ এক হাজার ৮০০ হেক্টর।

ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলায় এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৭৫০ হেক্টর জমিতে নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে ৩০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে মরিচের ফলন ও দাম বেশ ভালো।’

চাষি, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন জেলার পাইকাররা পাগলীমার হাটে আসায় খুশি মরিচ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। দিন দিন মরিচের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে চাহিদা।

গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন কোটি টাকার ওপরে মরিচ বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা শহরের কিচেন মার্কেটের আড়তদার শেখ কামাল আহমেদ।

তিনি বলেন, ‌‘মরিচের জন্য বিখ্যাত পাগলীমার হাট। প্রতিদিন ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসেন এখানে। বিকাল পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মরিচ যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই হাটে বিন্দু মরিচ, সাপ্লাই মরিচ, ডেমা মরিচ, ডেমা হাইব্রিড মরিচ, জিরা মরিচসহ দেশি মরিচ পাওয়া যায়। প্রকারভেদে মরিচের মণ ২১০০-২৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।’

মরিচ চাষি আফজাল আহমেদ বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করছি। বিঘায় ফলন হয়েছে ২৮-৩০ মণ। প্রকারভেদে প্রতিমণ মরিচ বিক্রি করছি দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা। এক বিঘা জমির মরিচ বিক্রি করেছি ৭২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় মরিচ চাষে খরচ হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। খরচ বাদে এক বিঘায় লাভ হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও এক লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবো।’

মরিচ চাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার মরিচের কেজি তুলনামূলক বেশি। আশা করছি, এমন দাম থাকলে দেড় বিঘা জমির মরিচ বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারবো। গত বছর যে লোকসান হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে পারবো। সংসার খরচসহ ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারবো।’

বিভিন্ন জেলার ক্রেতা-বিক্রেতার আগমনে সরগরম থাকে আড়ত

একই এলাকার মরিচ চাষি অনাথ চন্দ্র রায় বলেন, ‘এবার তিন বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। বর্তমানে মরিচ ক্ষেতে প্রচুর পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। দোকান থেকে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক কিনে ক্ষেতে স্প্রে করেছি। এতে ফলন কমের আশঙ্কা রয়েছে। এবার মরিচের দাম অনেক ভালো। এই মৌসুমে মরিচ বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো। তবে কৃষি কর্মকর্তারা যদি পরামর্শ দিতেন তাহলে ফলন আরও ভালো হতো।’

স্থানীয় মরিচ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পাগলীরমার হাটে শুধু কাঁচা মরিচের বেচাকেনা হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার আসায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে মরিচ কিনে ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন। এতে আমরা যেমন লাভবান হচ্ছি তেমনি আমাদের এলাকার কৃষকরাও ভালো দাম পেয়ে খুশি।’

বিভিন্ন জেলার পাইকাররা পাগলীমার হাটে আসায় খুশি মরিচ চাষি ও ব্যবসায়ীরা

পাগলীরমার হাটের আড়তদার সমিতির সভাপতি এনতাজুল হক বলেন, ‘এমন কোনোদিন নেই এখানে আট থেকে ১০ হাজার মণ মরিচ কেনাবেচা হয় না। এখানকার মরিচ সিরাজগঞ্জ, পাবনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। হাটটি উত্তরাঞ্চলে মরিচের জন্য বিখ্যাত। আশপাশের কয়েক উপজেলার চাষিরা এখানে মরিচ বিক্রি করেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি বিভাগের অব্যাহত পরামর্শ এবং নির্দেশনায় এই অঞ্চলে মরিচের উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মরিচের উৎপাদন বেশি হওয়ায় আমরা খুশি। পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো। জেলায় এবার এক হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ হেক্টর জমিতে বেশি মরিচ চাষ হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।’

Source link

Related posts

কঠোর লকডাউনে ছাড় নেই কারাবন্দীদেরও

News Desk

সিরাজগঞ্জে ২০ কিলোমিটার যানজট, ভোগান্তি

News Desk

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে কোম্পানীগঞ্জ ছেড়েছেন কাদের মির্জা

News Desk

Leave a Comment