‘আগে তো ভাড়া বাসায় থেকে বাচ্চাদের নিয়ে ঈদ করছি। কীভাবে বাসা ভাড়ার টাকা দেবো– তখন ঈদে এই চিন্তা থাকতো। কিন্তু এ বছর আর সেই চিন্তা নেই। যে টাকা বাসা ভাড়া দিতাম সেটা দিয়েই এবার বাচ্চাদের জামা-কাপড় কিনতে পারবো। কখনও ভাবিনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটা ঘর দেবেন। আমাদের তো কোনও জায়গা-জমি, ঘরবাড়ি নেই। এবার আমি নিজের ঘরে ঈদ করবো। এটা যে কত আনন্দের তা বলে বোঝাবার মতো নয়। ভাড়া বাসায় থাকার সময় তো নিজের মতো করে চলতে পারতাম না, গাছ লাগাতে পারতাম না। এই আমি বাসায় লাউগাছ লাগিয়েছি। অনেক লাউ খেয়েছি, এক বস্তা বিক্রিও করেছি।’
হাসিমুখে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের বড়ইল এলাকার জয়বাংলা পল্লির বাসিন্দা হামিদা বেগম। ভাড়া বাসার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে এবার তিনি ঈদ করবেন জয়বাংলা পল্লির নিজ বাসায়। স্বামী সিরাজুল ইসলাম ও দুই মেয়েকে নিয়ে তাই আগের ঈদের চেয়ে এবারে আনন্দটা একটু বেশি হামিদা বেগমের। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বাড়িটি গাছপালা লাগিয়ে বেশ পরিপাটি করে রেখেছেন তিনি। মিষ্টিকুমড়া- লাউয়ের পাশাপাশি আমগাছ, লেবুগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরের চালা থেকে কাস্তে হাতে মিষ্টিকুমড়ার শাক কাটছেন হামিদার মেয়ে সেঁজুতি আক্তার। নিজের লাগানো এসব গাছের শাক, মিষ্টিকুমড়া ও লাউ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবেশীদেরও দেন হামিদা।
হামিদা বেগমের প্রতিবেশী মল্লিকা বেওয়া। এক বছর আগে তিনিও থাকতেন ভাড়া বাসায়। তিনি বলেন, ‘১৪-১৫ বছর থেকে ভাড়া বাসায় থাকি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। বাসা ভাড়ার টাকা দিতে অনেক কষ্ট হতো। গত বছরের বাসা ভাড়ার টাকা আমি এই বাসায় আসার পর শোধ করলাম। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে এই বাড়িটা না দিতেন তাহলে বাসা ভাড়ার বোঝা এখনও টানতে হতো। এবার ঈদে কিছু কিনতে পারি বা না পারি নিজের বাসায় ঈদ করবো এটাই অনেক আনন্দের! এখন তো আর বাসা ভাড়ার টেনশন নেই। ঈদে খাবো-আনন্দ করবো।’
দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ১০ হাজার ৬১৮টি বাড়ি নির্মাণ করে গৃহহীনদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে চার হাজার ৬৬৭টি, দ্বিতীয় ধাপে তিন হাজার ১৬৫টি এবং তৃতীয় ধাপে দুই হাজার ৭২৯টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে। আর তৃতীয় ধাপের ঘরগুলো নির্মাণ করতে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
দিনাজপুর সদরের ফাজিলপুর ইউনিয়নের উলটগ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি বাড়ি পেয়েছেন ইব্রাহিম খলিল। এর আগে অনেক গ্রহহীন অবস্থায় কষ্ট করেই দিনাতিপাত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা আগে অন্যের জায়গায় ছিলাম। খুব কষ্ট করেই থাকতাম। আল্লাহতায়ালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে আমাদের জন্য এমন একটি উপহার দিয়েছেন। আমরা তো অসহায় ছিলাম। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমরা সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবো। আমরা যতদিন বাঁচবো প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করবো। যেদিন ঘর পেয়েছি সেদিনই আমাদের ঈদের মতো খুশি লেগেছে। পরিবারে আমার বাবা ও মা আছে। স্ত্রী এবং চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আমার সংসার।’
বড়ইল, উলটগ্রাম কিংবা খানপুর দিনাজপুর সদরের এসব আশ্রয়ন প্রকল্পে যারা ঘর পেয়েছেন তারা এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ করতে পারছেন। এর আগের বছরে অনেকেই বাড়ি বরাদ্দ পেলেও করোনার কারণে উৎসব হয়নি। আবার আশ্রয়ন প্রকল্প-৩-এ যারা বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের নতুন বাড়িতে প্রথম ঈদ। সবমিলিয়ে এসব মানুষের এবারে আনন্দটাই অন্যরকম।
গৃহহীনদের বাড়ি বরাদ্দ প্রসঙ্গে দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন। এবারে তারা নিজের বাড়িতেই ঈদ করতে পারবেন। ঈদের সময় এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে। আমাদের সরকার চায় দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোভাবে জীবনযাপন। গৃহহীন এসব মানুষের বাড়িঘর দেখে তাদের সঙ্গে আমরাও আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দেশের কোনও মানুষ গৃহহীন থাকবেন না। মানুষের যে পাঁচটি মৌলিক চাহিদা, তার মধ্যে বাসস্থান একটি। এই মৌলিক চাহিদাটি পূরণ করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনও মানুষ কষ্টে থাক, অভাব অনটনে থাক– তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান না। দেশের সবচেয়ে বড় হিজড়া পল্লি হয়েছে দিনাজপুরে। গৃহহীন, হিজড়া, ভিক্ষুক, দরিদ্র, প্রতিবন্ধী সব মানুষকে সহযোগিতা করছেন তিনি। জমিসহ বাড়ি দিয়েছেন এবং প্রতিটি মানুষকে গৃহের মালিক করে দিয়েছেন। দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের আশ্রয়স্থল পাবে– এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, এখন বাস্তবের পথে।’