গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবিরকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী।
সম্প্রতি সাফারি পার্কে জেব্রা, বাঘসহ প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের স্বার্থে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, ‘নতুন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে মোল্লা রেজাউল করিমকে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি বন সংরক্ষক হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আছেন। ২-৩ দিনের মধ্যে তিনি দায়িত্ব বুঝে নেবেন।’
এর আগে, ৩১ জানুয়ারি বন অধিদফতরের এক আদেশে সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান ও বন্যপ্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকারনাইনকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বন অধিদফতরে সংযুক্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্থলে ফরিদপুর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম ও ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে পদায়ন করা হয়।
গত মাসে সাফারি পার্কটিতে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় রোববার (৩০ জানুয়ারি) সেখানে যান গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এ মাসে (জানুয়ারি) একটি বাঘও মারা গেছে, যা গোপন রাখা হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকার সন্দেহ পোষণ করে জেব্রাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন। একইসঙ্গে বাঘের মৃত্যুর ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক গোপন রাখার অভিযোগ করেন। ওই সময় জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান ও প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবিরকে স্বপদে বহাল রেখে তদন্ত সুষ্ঠু হবে না বলে উল্লেখ করে তাদের অপসারণের কথা বলেন। এর চার দিনের মধ্যে পার্কের শীর্ষস্থানীয় তিন কর্মকর্তাকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
প্রসঙ্গত, গত ২ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পার্কে ৯টি জেব্রা মারা যায়। ওই ঘটনায় প্রাণী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ড ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দেশের বিভিন্ন ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ২৩টি প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামাগারে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ড জানায়, মারামারি করে চারটি এবং পাঁচটি জেব্রা ইনফেকশনাল ডিজিজে মারা গেছে। পরে বোর্ডের সদস্যরা ধুয়ে পরিষ্কার ট্রে’র মধ্যে প্রাণীদের ঘাস পরিবেশন, কৃমিনাশক ওষুধ ও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করাসহ ১০ দফা সুপারিশ করেন।
আর জেব্রাগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং করণীয় বিষয়ে মতামত দেওয়ার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পরে শনিবার আরও দুটি জেব্রা মারা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা জেব্রা নানা সময়ে বংশ বিস্তারের পর পার্কটিতে এর সংখ্যা বেড়ে ৩১টিতে দাঁড়ায়। ১১টি মৃত্যুর পর পার্কে এখন জেব্রা রয়েছে ২০টি।