যশোর ইনস্টিটিউট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র মারুফুল ইসলাম সদরের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
ধন্যবাদ জানানোর কারণ হিসেবে সে জানায়, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিবছরের শুরুতেই সুন্দর মলাট, পরিষ্কার ছাপার উন্নতমানের বই নিয়মিত পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১৫০ টাকা হারে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্যে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে এবং দক্ষ খেলোয়াড় তৈরিতে স্কুল পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক খুদে শিক্ষার্থীর মাঝে একজন খুদে ডাক্তার হওয়ার বাসনা তৈরিসহ শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় সে আন্তরিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে।
ঠিক তেমনই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যশোর সদরের চুড়ামনকাঠি এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা তুফান শেখ। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমারে একখান ঘর দেছেন। এর আগে ভাড়ায় থাকতাম, কত্তো অত্যাচার সহ্য করিচি, কষ্ট হয়েচে অনেক। দুই শতক জায়গার পরে দুই রুমের ঘর পেয়ে এখন বেশ আরামেই আছি। আমাগের এমপির (কাজী নাবিল) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীরে সালাম জানাই।’
হৈবতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা স্মৃতি রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘আমি মূলত একজন কিষানি। উপজেলা কৃষি অফিস আর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সহায়তায় বাড়ির পাশে এবং জমিতে কৃষি ফসল উৎপন্ন করে আজ আমি স্বাবলম্বী। আমি প্রধানমন্ত্রীকে এই কারণে কৃতজ্ঞতা জানাই, তাকে ধন্যবাদ।’
প্রায় একই কথা বলেন দেয়াড়া ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আগে নিজের ইচ্ছেমতো কৃষিকাজ করতাম। কিন্তু এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষাবাদ করি। বিনামূল্যে বীজ আর সার পেয়েছি। তাদের বাতলে দেওয়া পথে চাষাবাদ করে এখন আমি বেশ লাভের মুখ দেখছি।’
তাদের মতো ইছালি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জবেদ আলী মোল্লা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ শুনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন প্রতি মাসে ২০ হাজার করে টাকা ভাতা দিচ্ছেন। সেই টাকায় খেয়েপরে বেঁচে আছি। তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।’ এভাবে উপকারভোগী খামারি নিলুফার ইয়াসমিন, বয়স্ক ভাতাপ্রাপ্ত মাহিদিয়া গ্রামের আনোয়ার মুন্সী (৮১), প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহীতা বর্তমানে চা দোকানি রবিউল ইসলাম, বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত মাকসুদা বেগমসহ ১১ জন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
শনিবার (২১ অক্টোবর) বিকালে যশোর টাউন হল মাঠে সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, নারী ও শিশুদের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকারের গৃহীত নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে যশোর সদর উপজেলার প্রত্যক্ষ উপকারভোগী জনসাধারণের পক্ষ থেকে এই ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি যত ষড়যন্ত্রই হোক না, তারা সফল হবে না। কেননা, এ দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। তার প্রতি অগাধ আস্থা রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে কাজী নাবিল বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতে জি-২০ সামিট হয়ে গেলো। সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শুধু দেশের মানুষের উন্নয়নে তার ভূমিকার জন্যে। সেখানে বিশ্বের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন।’
এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘ফিলিস্তিনি সাধারণ নারী-পুরুষ, শিশুকে হত্যার প্রতিবাদে আজ আমাদের দেশে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এই বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সেই সাহস দেখাতে পারেনি। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমরা শেখ হাসিনাকে পেয়েছি।’
বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে এমপি কাজী নাবিল বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছি। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, রাস্তাঘাট, ব্রিজ প্রত্যেকটি উন্নয়নের কারণে সারা বিশ্বে আমরা এখন রোল মডেল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের গল্প শুনতে চান।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমাদের জিডিপি ছিল মাত্র ৬০ মিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬০ মিলিয়ন ডলারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল তিন হাজার মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে অনেক। এগুলো সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে।’
এমপি কাজী নাবিল আরও বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা ভাবেন। সেকারণে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছেন, তাদের ভাতা বাড়িয়েছেন। দেশের বিধবা, বয়স্ক, শিক্ষা উপবৃত্তি এমন দেড়শ বিভিন্ন ভাতা চালু করেছেন, যাতে এ দেশের মানুষ একটু ভালো থাকতে পারে।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্যে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে সেটি বন্ধ করে দেয়। কেননা তারা চায় না, এ দেশের হতদরিদ্র মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাক। জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ফের এটি চালু করেন। যা এখন আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর এইসব সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি জামায়াতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের ভেতরে তারা ষড়যন্ত্র করছে। কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানে না। জনগণ ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের নারকীয় কর্মকাণ্ড ভোলেনি, ভোলা যায় না। দেশব্যাপী সিরিজ বোমা, গ্রেনেড হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে কানসাটে গুলি, সার চাইতে গিয়ে ১৮ কৃষকের মৃত্যুর কথা দেশবাসী ভুলতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে তারা প্রায় তিন হাজার সরকারি অফিসে আগুন দেয়। চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। ঘুমন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলেছে, গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে। তাদের সেই নাশকতা দেশবাসী কখনোই ভুলবে না।’
কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসন জননেত্রীকে উপহার দিতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে আমাদের উন্নয়ন যাত্রা সচল থাকবে, দেশ শান্ত থাকবে।’
যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনুপ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, পৌর মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ, যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন বিপুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিলিস্তিনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।