এস আলমের কারখানায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ড, জনমনে নানা প্রশ্ন
বাংলাদেশ

এস আলমের কারখানায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ড, জনমনে নানা প্রশ্ন

চট্টগ্রামভিত্তিক অন্যতম বড় শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কারখানাগুলোতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটেই চলছে। গত দুই মাসে শিল্পগ্রুপটির অন্তত তিনটি কারখানায় আগুন লেগেছে। এসব আগুনের ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা বা অন্য কিছু— তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন বার বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখার প্রতিও জোর দিচ্ছেন কেউ কেউ। যদিও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আগুন লাগার এসব ঘটনা স্বাভাবিক। এতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ছিল না, অজান্তেই ঘটে গেছে।’

এরমধ্যে গেলো মার্চ মাসে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন ‘তাজা মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড’ নামের হিমাগারে পৃথক আগুন লাগে। সবশেষ আজ শুক্রবার (১২ এপ্রিল) এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড নামে ভোজ্যতেলের মিলের একটি গুদামে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। যে গুদামটিতে আগুন লেগেছে ওই ভবনের মাত্র ১০ ফুট দূরত্বেই ছিল তেলের মজুত। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তেলে আগুন ছড়িয়ে পড়লে তা নেভানো কঠিন হতো। শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। 

এর আগে গত ৪ মার্চ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১ নম্বর গুদামে আগুন লাগে। প্রায় ৬ দিন পর ৯ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা সম্ভব হয় বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। আগুন লাগা গুদামটিতে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির মজুত ছিল। আগুন নির্বাপণের পর প্রায় ৮০ শতাংশ চিনি রক্ষা করা সম্ভব হয় বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

এদিকে এস আলম এর চিনির গুদামে আগুন লাগার পর শুরু হয় চিনির বাজারে দামে অস্থিরতা। সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে কেজি প্রতি দাম বাড়ে ৫ টাকা পর্যন্ত। 

এরও আগে ১ মার্চ বেলা ১১টার দিকে বাকলিয়া থানাধীন সৈয়দ শাহ রোডের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কার্যালয়ের পাশে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন ‘তাজা মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড’ নামের হিমাগারে আগুন লাগে। আগুনে কেউ হতাহত না হলেও হিমাগারটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি স্টেশনের ১০টি ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) সকালে মইজ্জারটেকে অবস্থিত এস আলম ভেজিটেবল অয়েল মিলে আগুন লাগে। খবর পেয়ে সকাল ৮টা ২৭ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ সম্ভব হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্ণফুলী, লামার বাজার, চন্দনপুরা ও আগ্রাবাদসহ মোট চারটি স্টেশনের ৮টি ইউনিট কাজ করেছে।’ 

তিনি জানান, ‘আগুন লাগা ভবনের পাশেই তেলের মজুত ছিল। সেখানে আগুন ছড়িয়ে পড়লে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টকর হতো। তবে এ যাত্রায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেল।  দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।’

এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড

কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জারটেক এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, ‘একের পর এক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কারখানাগুলোতেই আগুন লাগছে। এসব আগুনের ঘটনাগুলো স্বাভাবিক নাকি অন্য কোনও হেতু আছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

এ প্রসঙ্গে এস আলম গ্রুপের ম্যানেজার (প্রশাসন) মো. হোসাইন রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ সকালে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল মিলের একটি পরিত্যক্ত গুদামে আগুন লেগেছে। এতে মিলের কোনও ক্ষতি হয়নি। কেননা মিলে উৎপাদন বন্ধ ছিল। আগুন লাগা গুদামটিতে কিছু বাতিল কাগজপত্র ছিল। আগুন মিলের লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মিলে নিয়ন্ত্রণ করেছে। হয়তো গরমের কারণে এ আগুন লেগেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানায় আগুন লাগার এসব ঘটনা স্বাভাবিক। আগুন লাগার ঘটনায় নাশকতা কিংবা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ছিল না। অজান্তেই ঘটে গেছে।’

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এস আলমের চিনি কারখানায় লাগা আগুনের চিনির পোড়া লাভা কর্ণফুলী নদীতে পড়তেই মরেছে বিভিন্ন ধরনের মাছসহ নানা জীব-বৈচিত্র। যা কর্ণফুলীর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।’

আরও পড়ুন:

চট্টগ্রামে এস আলমের তেলের কারখানায় আগুন

Source link

Related posts

লকডাউনে যে সকল বিধিনিষেধ মানতে হবে

News Desk

কৃষকের ৪ টাকার আলুর কেজি বাজারে কেন ২০?

News Desk

কাপ্তাই হ্রদে পানি কমায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

News Desk

Leave a Comment