ওজন স্কেলের কারসাজিতে বেনাপোল ছাড়ছেন আমদানিকারকরা
বাংলাদেশ

ওজন স্কেলের কারসাজিতে বেনাপোল ছাড়ছেন আমদানিকারকরা

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে সম্প্রতি ফল আমদানি অনেক কমে গেছে। এখন বেশির ভাগ আমদানিকারক সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি করছেন।

হঠাৎ করে কেন আমদানিকারকরা ভোমরা বন্দরের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন—এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য।

আমদানিকারকরা বলছেন, বেনাপোল স্থলবন্দরে ডিজিটাল ওয়েট (ওজন) স্কেল অপরদিকে ভোমরা বন্দরে ব্যবহার করা হচ্ছে ম্যানুয়াল ওজন স্কেল। সেই ক্ষেত্রে ওজনের একটা বিরাট তারতম্য ঘটানো সম্ভব হয় সেখানে ওজন করার ক্ষেত্রে। আর এটি লুফে নেন আমদানিকারকরা। কারণ, এই ওজন স্কেলের মাধ্যমে তারা আমদানিকৃত পণ্যের বিরাট অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দিতে সক্ষম হচ্ছেন। আর এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত খোদ ভোমরা স্থলবন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোল স্থলবন্দরের একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি অত্যন্ত কম হচ্ছে। আগে যখন প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে ৫০-৬০ ট্রাক ফল আমদানি হতো, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩-৪ ট্রাক। এর ফলে সরকার মোটা অঙ্কের শুল্ক হারাচ্ছে। অপরদিকে, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ ট্রাক ফল আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকারকরা এই বন্দর ব্যবহারের ফলে ট্রাকপ্রতি দেড় থেকে দুই টনের বেশি শুল্ক ফাঁকির সুযোগ পাচ্ছেন। সে কারণে তারা এই বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত ২০ মার্চ ভারত থেকে আঙুরবোঝাই একটি ট্রাক (ডব্লিউবি২৫এল-৬৪৬৮) বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওজন স্কেলে ওই ট্রাকের ওজন স্লিপ দুটি। এর একটি হচ্ছে আমদানিকারকের জন্যে; অপরটি সরকারের শুল্ক আদায়ের জন্যে। আমদানিকারকের জন্যে প্রথম স্লিপে ট্রাকের গ্রস ওজন দেখানো হয়েছে ৪০ হাজার ৭৮০ কেজি এবং নেট ওজন ২৭ হাজার ৮৮০ কেজি। আর সরকারের রাজস্বের জন্যে প্রিন্ট করা ওজন স্লিপে গ্রস ওজন দেখানো হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৮০ কেজি এবং নেট ওজন ২৫ হাজার ৯০০ কেজি। এই ওজনের মাধ্যমে কমানো হয়েছে ১ হাজার ৯৮০ কেজি বা প্রায় দুই টন। এই ১ হাজার ৯৮০ কেজি পণ্যের রাজস্ব আসে প্রায় দুই লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৫০টি ট্রাকে এমন হলে প্রায় এক কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

ভোমরা স্থলবন্দর

জানতে চাইলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গাজী এক্সিমের স্বত্বাধিকারী গাজী শামিম উদ্দিন বলেন, ‘গত এক মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি হচ্ছে না বললেই চলে। সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারক ভোমরা বন্দর ব্যবহার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে রাজস্ব আদায়ের সুনাম আছে, তা ম্লান হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভোমরা বন্দরে যে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করে ডিজিটাল ওজন স্কেল স্থাপন করে সরকারের রাজস্ব আয়ের পথ বিকশিত করতে হবে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভোমরা স্থলবন্দরের কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক বলেন, ‘এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। নিউজ হওয়ার মতো কিছুই না। ভোমরা বন্দর এখন পর্যন্ত একমাত্র স্বচ্ছ বন্দর।’

Source link

Related posts

‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ জাদুঘর যেন ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি

News Desk

দিনাজপুরে আবারও সিজারের পর প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু

News Desk

মেঘনায় ফেরিতে আগুন, পুড়ল ৮ টি পণ্যবাহী ট্রাক

News Desk

Leave a Comment