ওঠানামা করতে পারবে সাড়ে চার লাখ কনটেইনার, বাড়বে আমদানি-রফতানি
বাংলাদেশ

ওঠানামা করতে পারবে সাড়ে চার লাখ কনটেইনার, বাড়বে আমদানি-রফতানি

দীর্ঘ অপেক্ষার পর খুলে দেওয়া হলো চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি চালু হওয়ায় বছরে চার লাখ ৪৫ হাজার থেকে পাঁচ লাখ কনটেইনার ওঠানামা করতে পারবে। সেইসঙ্গে বন্দর দিয়ে বাড়বে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য।

টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান। সৌদি আরব ভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে’ এটির দায়িত্ব পাচ্ছে। চুক্তির দিন থেকে ২২ বছরের জন্য টার্মিনাল পরিচালনা করবে তারা। এর মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেলো বিদেশি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে টার্মিনালটি নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনালে একসঙ্গে কনটেইনারবাহী তিনটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। বছরে চার লাখ ৪৫ হাজার থেকে পাঁচ লাখ কনটেইনার ওঠানামা করতে পারবে। বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় বন্দরের বাকি টার্মিনালগুলো থেকে এখানে বেশি গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ মিটার গভীরতার ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে, সেখানে পিসিটিতে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১০ দশমিক পাঁচ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রস্তুত, এখানে শিগগিরই পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সৌদি আরব ভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল পরিচালনা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি বাকি আছে। এর বাইরে পিসিটি পরিচালনার জন্য বিদেশি ওই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। চুক্তির পর প্রতিষ্ঠানটি এখানে বিনিয়োগ করবে।’

২০২২ সালের জুন মাসে টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বলে জানালেন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখন অপারেটর নিয়োগের অপেক্ষায় আছি। অপারেটর নিয়োগের মধ্য দিয়ে টার্মিনালে কর্মযজ্ঞ শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি এই টার্মিনালের অবস্থান। চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার আগে পড়বে। যে কারণে আসা-যাওয়া মিলে ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। এতে সাশ্রয় হবে জ্বালানি ও সময়। সেইসঙ্গে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানো যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের বাকি সব টার্মিনালে এই পরিমাণ ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যায় না। নতুন টার্মিনালে বেশি কনটেইনার নিয়ে বড় জাহাজ ভেড়ার সুযোগ থাকায় যেমন খরচ কমবে তেমনি পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়বে।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও প্রকল্প এলাকায় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা স্থানান্তরসহ নানা জটিলতার কারণে কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। বন্দরের ড্রাইডক থেকে বোটক্লাব পর্যন্ত ২৬ একর জমিতে এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। নিজস্ব তহবিল থেকে এতে অর্থায়ন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করেছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

টার্মিনালের ৫৮৪ মিটার লম্বা জেটিতে একসঙ্গে কনটেইনারবাহী তিনটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। টার্মিনালে রয়েছে ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন (তেল খালাসের) জেটি, ৮৯ হাজার বর্গমিটার আরসিসি ইয়ার্ড, দুই হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার শুল্ক স্টেশন, দুই হাজার ১৫০ মিটার লম্বা, ছয় মিটার উচ্চতায় কাস্টম বন্ডেড হাউস, দুই হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্র্যাক, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, এক হাজার ২০০ বর্গমিটার মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ এবং পাঁচ হাজার ৫৮০ বর্গকিলোমিটার অফিস ভবন।

বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৪ শতাংশ পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। দেশে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য যে হারে বাড়ছে, তাতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনেক আগেই দেখা দিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ টার্মিনাল নির্মাণ করা হয় ২০০৭ সালে; নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় পর পতেঙ্গা টার্মিনাল নির্মাণ করা হলো। এ নিয়ে বন্দরে টার্মিনালের সংখ্যা হলো চারটি। সেইসঙ্গে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বন্দরের মূল জেটির সংখ্যা হবে ২১টি।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপি) টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগে কাজ করছে। সৌদি আরব, দুবাই, ভারত ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পিসিটি পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আমদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএস সিঙ্গাপুর প্রস্তাব দেয়। এসব প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে রেড সি গেটওয়েকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেড সি গেটওয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক পোর্টের বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল পরিচালনার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দর সম্প্রসারণ ও নির্মাণ করে থাকে। জেদ্দা পোর্ট বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের তালিকায় ৪১তম। চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম।

রেড সি গেটওয়ে তাদের প্রস্তাবে বলেছে, পিসিটি পরিচালনায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিযোগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। যা বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার ৬৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)। নিজেদের অর্থে যন্ত্রপাতি কিনে ২২ বছরের জন্য টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি করবে।

Source link

Related posts

১০ জেলায় ট্যাংক লরি শ্রমিকদের ধর্মঘট

News Desk

ট্রেনে আসে হানাদাররা, রাজাকারদের গুজবে নিরীহ বাঙালিদের ওপর নৃশংস তাণ্ডব

News Desk

খুঁটিতে গরু বাঁধলেই দিতে হয় টাকা

News Desk

Leave a Comment