বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন করছে জেলা প্রশাসন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে। ইতোমধ্যে পর্যটন মেলা ও কার্নিভালকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে পর্যটন মেলার মঞ্চ ও দুই শতাধিক স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে খাবারের রেস্তোরাঁ, কিটকটসহ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ছাড় দেওয়া সহ নেওয়া হয়েছে নানান প্রস্তুতি।
কক্সবাজারকে আরও বেশি পর্যটকমুখি করতে এমন আয়োজন বলে জানিয়েছেন পর্যটন মেলার আহ্বায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন।
তিনি বলেন, ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ এ প্রতিপাদ্যে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে কক্সবাজার পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে রয়েছে নানা আয়োজন ও সুযোগ সুবিধা। পর্যটকদের কথা চিন্তা করে কক্সবাজারে হোটেল মোটেল মালিক থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটন মৌসুমকে বরণে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। একই সাথে খাবারের রেস্তোরাঁয় ১৫, সব বাস ভাড়ায় ২০, হেলিকপ্টার জয় রাইডে ১০, টিউব ভাড়ায় ৩০, কিটকট চেয়ার ভাড়ায় ৩৩, ফটোগ্রাফারদের মাধ্যমে ছবি তোলা প্রতি কপি দুই টাকা, প্যারাসেইলিং রাইডে ৩০, জেটস্কি ও বিচ বাইক রাইডে ৩৩, লকার ভাড়ায় ৫০, গাড়ি পার্কিংয়ে ৫০, ফান গেমে ৫০ শতাংশসহ চাঁদের গাড়ি ও বিমান ভাড়ায় বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিনামূল্যে সার্কাস শোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে পর্যটকদের আনন্দ দিতে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় উন্মোচন হবে ‘থিম সং’। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই সকাল ১০টা হতে ঘণ্টাব্যাপী চলবে সৈকত এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ২৫ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী চলবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত থাকছে বর্ণাঢ্য র্যালি। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন হবে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল।
সকাল পৌনে ১০টায় থাকছে বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ-র্যালি। এ ছাড়াও প্রতিদিন সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট।
লাবনী পয়েন্টের এ মেলায় পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনে এবারের মেলায় রাখা হচ্ছে বিনামূল্যে সার্কাস প্রদর্শনী। স্থানীয় শিল্পীর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা আসবেন। আসছেন কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেট আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে আসা শিল্পীরা পরিবেশন করবেন হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়াপালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওইয়া গানের শিল্পীরা আসবেন। বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দল।
চট্টগ্রাম থেকে আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী প্রেম সুন্দর ছাড়াও আসবেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। একেক দিন মঞ্চে গাইবেন লিজা, ঐশী, তানজির তুহিন, রবি চৌধুরী, নিশিতা বড়ুয়াসহ আরও অনেক জাতীয় শিল্পী। সাত দিন গানে, আড্ডায়, খেলাসহ বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে পর্যটকসহ এলাকার সব বাসিন্দাদের মাতিয়ে রাখবে পর্যটন মেলা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ হচ্ছে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া। মেলা উপলক্ষে বাড়তি সতর্ক থাকবে পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে থাকবে সাদা পোশাকধারী পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’
জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে সাত দিনের পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে সৈকত বিপুল পর্যটক আগমন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারে সে জন্য নেওয়া হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত।’
এদিকে, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতি এবারে নড়েচড়ে বসেছে। কক্সবাজারে পর্যটকমুখি করতে যা যা করণীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সবকিছু করবে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোখিম খান জানান, ‘পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে, হোটেলের মান রেখে কিছু কিছু হোটেল-মোটেল ছাড়ের ক্ষেত্রে কমবেশি হতে পারে।’
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য সবসময় দুয়ার খোলা। কারণ পর্যটকরা সুযোগ-সুবিধা পেলে পর্যটনের প্রসার ঘটবে। তাই পর্যটন জোনে সব হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটি মেলা চলাকালে চলবে।’