ঈদের দ্বিতীয় দিনে লোকে লোকারণ্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। বুধবার (০৪ মে) বিকালে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈকতের বালিয়াড়িতে ঢেউয়ের তালে নেচে-গেয়ে আনন্দে মেতেছেন লাখো পর্যটক।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে দুই লাখ পর্যটক এরই মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে এসেছেন। আগামী দু’একদিনের মধ্যে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, এবার ঈদে সাত দিনের ছুটিতে প্রতিদিন কক্সবাজারে দুই লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম হবে। এরই মধ্যে অধিকাংশ পর্যটক চলে এসেছেন, বাকিরা আসছেন।
বুধবার সকাল ও বিকালে সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সীগাল, লাবণী ও কবিতা চত্বর পয়েন্ট থেকে সৈকতে নামেন লাখো পর্যটক। সমুদ্রস্নান, ঢেউয়ের সঙ্গে টায়ার নিয়ে দোল, নোনাজলে সাঁতার, ওয়াটার বাইক রাইডিংসহ প্রিয়জনের সঙ্গে সেলফি তুলে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছেন তারা। বালিয়াড়িতে বালুর মধ্যে গড়াগড়ি, সমুদ্রের পানিতে গা ভাসিয়ে সাঁতার কাটা, ঢেউয়ের তালে নাচানাচি ও ঘোড়া নিয়ে ছোটাছুটিতে মেতেছেন অনেকে। দেখে মনে হয়েছে দীর্ঘদিন পর আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে মেতেছেন তারা।
ঢাকা থেকে সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা নুর হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারে ঈদ করার জন্য এবার আগেই চলে এসেছি। পরে এলে পর্যটকের ভিড় থাকে। এজন্য আগেভাগেই হোটেল বুকিং দিয়েছি। ঢাকা থেকে সোমবার সকালে রওনা দিয়ে বিকালে কক্সবাজারে পৌঁছাই। এখানে ঈদ করেছি এবার। পরিবারের সঙ্গে এখানে চার দিন থাকবো। শুক্রবার ঢাকায় ফিরে যাবো।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তান ও মা-বাবাকে নিয়ে ঘুরতে এলাম। সবাই একসঙ্গে ঈদ করেছি। বুধবার বিকালে বালিয়াড়িতে ঢেউয়ের তালে নেচে-গেয়ে অনেক আনন্দ করেছি আমরা। আরও দুদিন থাকবো।’
গাজীপুর থেকে কক্সবাজারে ঈদের ছুটি উদযাপন করতে যাওয়া আরমান হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হই। বুধবার সকালে পৌঁছেছি আমরা। বিকালে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ঘুরতে এলাম। সুমদ্রের ঢেউ এবং পরিবেশ দেখে অনেক ভালো লেগেছে। প্রথমবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে এলাম।’
রাজশাহী থেকে আসা তাশরিফ হোসেন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের লোকজন নিয়ে আজ এখানে বেড়াতে এসেছি। প্রচুর পর্যটক এসেছেন। বিকালে সৈকতে সবাই একসঙ্গে আনন্দ করেছি। মন ভালো হয়ে গেছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সাতটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বসিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এখনও তাদের কাছে কোনও ধরনের অভিযোগ আসেনি।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘সাত দিনের ছুটিতে ১০ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। বাকিগুলোও দু’একদিনের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সৈকতে দুই লাখের মতো পর্যটক নেমেছেন বলে আমাদের ধারণা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সমুদ্রসৈকতে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। পর্যটকদের হয়রানির কোনও অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সব ধরনের হয়রানি ঠেকাতে চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলছে। হয়রানির অভিযোগ এলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেছেন, ‘ঈদের ছুটিতে আগামী সাত দিন কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসবেন। এরই মধ্যে কয়েক লাখ এসেছেন। এ অবস্থায় পর্যটকদের হয়রানি এবং কক্ষ ভাড়া বেশি না নিতে হোটেল মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভাড়ার তালিকা হোটেলে টানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’