কথা দিয়ে রাখেনি আমিন, পাজেরো গাড়িতে ৭ লাখ ইয়াবা
বাংলাদেশ

কথা দিয়ে রাখেনি আমিন, পাজেরো গাড়িতে ৭ লাখ ইয়াবা

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। এর মধ্যে একজন আব্দুল আমিন (৪০)। রবিবার রাতে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে সাত লাখ ইয়াবা দেশে পাচারের সময় তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাটুয়ারটেক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় একটি এসইউভি পাজেরো গাড়ি থেকে সাত লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আব্দুল আমিন টেকনাফ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ডেইলপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। একই ঘটনায় তার সহযোগী ইয়াবা কারবারি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদারবিল এলাকার গরু ব্যবসায়ী আবু সৈয়দের ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৩৫), ওই এলাকার মৃত মোহাম্মদ হাসেমের ছেলে নুরুল আবসার (২৮), ডেইলপাড়ার মৃত দীল মোহাম্মদের ছেলে জাফর আলমকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (২০ মে) দুপুরে র‌্যাবের কক্সবাজার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক মেজর শরিফুল আহসান। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শরিফুল আহসান বলেন, ‘আত্মসমর্পণকৃত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল আমিনের নেতৃত্বে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে ইয়াবার একটি বড় চালান প্রাইভেটকারে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে আসছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার রাতে পাটুয়ারটেক এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি শুরু করে র‌্যাব। এ সময় টেকনাফ থেকে কক্সবাজারগামী কালো রঙের বিলাসবহুল একটি প্রাইভেটকারকে থামার সংকেত দিলে তা অমান্য করে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেটি ধাওয়া করে থামানো হয়। এরপর তল্লাশি করে গাড়ির পেছনে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা সাত লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়। পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসায়ী আব্দুল আমিনসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।’

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাবের উপ-অধিনায়ক বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল আমিন ইয়াবা পাচারের কথা স্বীকার করেছে। সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।’

গ্রেফতারকৃত চার মাদক ব্যবসায়ী

আমিন একসময় মুদি ব্যবসা এবং বিভিন্ন গরুর হাটের ইজারাদারি করতো জানিয়ে শরিফুল আহসান বলেন, ‘পরে পলিথিন ও কার্পেট ব্যবসায় জড়ায়। এই ব্যবসার আড়ালে ইয়াবার পাচারে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বার্মাইয়া সিরাজের ইয়াবার বড় বড় চালান সমুদ্রপথে ট্রলারযোগে দেশে আনতো। এসব চালান কয়েকদিন নিজের হেফাজতে রাখতো। সুযোগ বুঝে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিতো। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত হয়। নিজেকে বাঁচাতে আত্মসমর্পণ করেছিল। দেড় বছরের বেশি সময় কারাভোগ শেষে জামিন পায়। কিছুদিন ব্যবসা বন্ধ রেখেছিল। পরে আবারও ব্যবসায় জড়িয়ে যায়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে তার এজেন্টদের চাহিদা অনুযায়ী পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাইভেটকারযোগে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে নিয়ে আসছিল। আমিনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদকসহ ১১টি মামলা রয়েছে।’

গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ হলো আমিনের ভাগনে উল্লেখ করে মেজর শরিফুল আহসান বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে গরু এনে ব্যবসা করতো আব্দুল্লাহ। বার্মাইয়া সিরাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে গরু ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। ধীরে ধীরে মামার সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হয়। আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার নুরুল আবসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ভগ্নিপতি। তার বিরুদ্ধে একটি ও জাফর আলমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে উখিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Source link

Related posts

বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে ৩০ মিনিটে আনোয়ারা থেকে বিমানবন্দর

News Desk

চুয়াডাঙ্গায় নকল ওষুধ তৈরির কারখানা সিলগালা 

News Desk

প্রথম ডোজের টিকা বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কায় কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

News Desk

Leave a Comment