Image default
বাংলাদেশ

কম খরচে দ্বিগুণ লাভ, খুলনায় ৮০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ

খুলনায় ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। সকালে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরিষা ফুল হেসে ওঠে। যেন হলুদে সেজেছে প্রকৃতি। জেলায় এ বছর ৮০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৬৫০ হেক্টর। কম খরচে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় বছর বছর বাড়ছে আবাদ।

কয়রা উপজেলার উলা ও ৩ নম্বর কয়রার সরিষা মাঠে দেখা যায়, সৌন্দর্য উপভোগ করতে সরিষা মাঠে ভিড় করেছেন নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বিনোদনপ্রেমীরা। সরিষা মাঠে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। এক মাঠ থেকে অন্য মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। 

বাগালী ইউনিয়নের কৃষক আলাউদ্দীন ওরফে বাবু বলেন, সরিষা চাষে কম খরচে দ্বিগুণ লাভ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে সাত-আট মণ সরিষা পাওয়া যায়। সরিষা ঘরে তোলার পর ওই জমিতে মুগ ডাল চাষ করি। সরিষা আবাদের কারণে জমিতে বাড়তি হাল চাষ, সার ও কীটনাশক দিতে হয় না। তাই প্রতিবছর সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

উলা এলাকার কৃষক মজিবর রহমান বলেন, দেশি সরিষার জাতগুলোর চেয়ে বারি ১৮ জাতের সরিষার ফলন ভালো হয়। স্বল্প খরচে অধিক ফলন ও ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই প্রতিবছর সরিষার আবাদ করি। উঁচু জমি সরিষা চাষের জন্য উপযুক্ত। প্রথমে হালকাভাবে চাষ করে সরিষার বীজ বপন করতে হয়। পরে দু’একবার কীটনাশক দিলেই ফলন ভালো হয়। বীজ বপনের ৮০-৮৫ দিনের মধ্যেই সরিষার ফলন ঘরে তুলতে পারি। ধান তোলার পর এই সময়ে জমিতে সরিষার চেয়ে ভালো ফসল আর কিছুই হতে পারে না।

কয়রা গ্রামের কৃষক আহমেদ আলী বলেন, কয়েক বছর আগেও আমাদের জমি পরিত্যক্ত থাকতো। বর্তমানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করছি। গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো হবে আশা করছি। ছয় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। 

প্রকৃতিপ্রেমী বিপাশা বিশ্বাস বলেন, সরিষা ক্ষেতের এমন সৌন্দর্য কাছ থেকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। সরিষার যে ঘ্রাণ অনুভব করি, সেটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। 

গবেষণা বিভাগ এমএলটি সাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, এবছর গবেষণা বিভাগ থেকে কয়রা উপজেলার বিভিন্ন কৃষককে বারি ১৪, ১৭ ও ১৮-এর সরিষার বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবছর সরিষা আবাদে পোকার আক্রমণ না থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। সরিষা চাষ কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প সময়ে একটি বাড়তি ফসল উৎপাদন করতে পারেন তারা। কৃষকরা লাভবান হন, পাশাপাশি জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়।

গবেষণা বিভাগ খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুনুর রশিদ বলেন, এবছর কৃষককে সরিষা চাষে সচেতন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে কৃষকদের বারি ১৮ সরিষার বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। কয়রা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সভা ও উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। সরিষা চাষের পদ্ধতি ও পোকার আক্রমণ হলে কি করণীয় সে বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করছি। তাছাড়া কৃষি বিজ্ঞানীরা সবসময় মাঠে থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।

কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপ-সহকারী প্রশিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে খাদ্য চাহিদা পূরণ ও কৃষির গতিকে আরও সমৃদ্ধশালী করে তোলার লক্ষ্যে নানামুখী চাষাবাদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি আমরা। বিনা সরিষা-৪ উৎপাদনের ব্যাপারে তিনি বলেন, পরমাণু কৃষি গবেষণার উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাত হলো বিনা সরিষা-৪। জাতটি অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে চাষাবাদ শুরু করতে হয়। বপন হতে কর্তন পর্যন্ত সময়কাল ৮০ থেকে ৮৫ দিন। সরিষার গুণগত বৈশিষ্ট্য হলো ফল গোল ও রং লালচে এবং কালো। যদি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয় তবে হেক্টর প্রতি ১.৮ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়। চাষকৃত বিনা সরিষা, বারি সরিষা-১৪-তে তেল পাওয়া যায় ৪০ ভাগ। বিনা সরিষা-৪ এ ৪ ভাগ বেশি তেল পাওয়া যায়। সাধারণত এই সরিষা অন্যান্য ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ কম। জাবপোকা আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মেলাথিয়ন-৫৭ ইসি অথবা সেভিন পাউডার স্প্রে করা হয়। এই জাতীয় সরিষার সবচেয়ে বড় গুণ হলো লবণাক্ত জমিতে চাষ উপযোগী। বপনের শুরু থেকে সর্বমোট তিনটি চাষাবাদ লাগে আর সেচ লাগে দুটি। 

স্থানীয় কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস থেকে বীজ এবং আংশিক সার দিয়ে সহায়তা করেছে এবং বিভিন্ন সময়ে ফসলের ক্ষেত মনিটরিং করেছে। তাদের সহায়তার পাশাপাশি সেচ ও আংশিক সার প্রয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি, সাফল্যের মুখ দেখবো। আর্থিকভাবে লাভবান হবো।

দৌলতপুুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, আমার মেট্রো থানাধীন এলাকায় ছয়টি প্রদার্শনী প্লট করেছি। প্রদার্শনী প্লটের মধ্যে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মাঠে বিনা সরিষা-৪ একটি। ছয় জন কৃষককে গম, ভুট্টা, সরিষা বীজ ও আংশিক সার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে কোনও পতিত জমি পড়ে থাকবে না। সেজন্য তৃণমূল কৃষকদের কৃষি নির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের মূল লক্ষ্য।

কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সত্যব্রত নাগ জানান, তার প্রতিষ্ঠানে দৌলতপুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস কর্তৃক বিনা সরিষা-৪ প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। প্রদর্শনী চাষাবাদ করার উদ্দেশ্য হলো কৃষি আধুনিকায়ন তথা নতুন নতুন জাতের বীজ বপনের মাধ্যমে কৃষিকে সমৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকদের কৃষিকাজে আগ্রহী করে তোলা। লাভবান হওয়ায় নতুন জাতের সরিষা চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠেন কৃষকরা। তার প্রদর্শনীতে ফসলের মাধ্যমে আশপাশের কৃষকরাও এই চাষাবাদে অধিক আগ্রহী হয়েছেন। ফলে বেড়েছে কৃষির সমৃদ্ধতা।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, এবছর খুলনায় ৮০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর এই চাষ ছিল ৬৫০ হেক্টর। এবছর ১৫৫ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। ধান ঘরে তোলার পর সরিষা বপন করা যায়। ফলে চাষিরা লাভবান হন। খুলনায় বারি ১৪ ও ১৮ সরিষা চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায়। খুলনা মহানগরী, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও কয়রাসহ অধিকাংশ এলাকায় সরিষার চাষ হয়েছে।

Source link

Related posts

আসনসংখ্যা কমাল ঢাবি

News Desk

নৌকায় ভোট চেয়ে যশোরে কাজী নাবিলের গণসংযোগ

News Desk

পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে চলে তাদের সংসার

News Desk

Leave a Comment