ঈদের পর থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরো ৪৪ জন। একদিনে মৃত্যুর এই সংখ্যা গত এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হারও বেড়েছে। মঙ্গলবার সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক। সেখান থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ স্বাভাবিক ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ গুণ বেশি সংক্রামক ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) যেটিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টও বলা হয়। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের দেহে রোগের লক্ষণ দ্রুত প্রকাশ পাচ্ছে। এটি সরাসরি রোগীর ফুসফুসকে আক্রমণ করছে। রোগীর অবস্থার খুব দ্রুত অবনতি ঘটছে।
দেখা যাচ্ছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মানুষের ভারতের সাথে যোগাযোগ বেশি বলে সেখানে করোনা সংক্রমণ বেশি। সেখান থেকে ভাইরাসটি এখন আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা এবং খুলনা, বাগেরহাট, নাটোর, নোয়াখালী ও কক্সবাজার জেলায় করোনার ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা গেছে। এই জেলাগুলোর অনেক হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। রয়েছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সঙ্কট। এসব জেলার কোথাও লকডাউন, কোথাও বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যেই বাড়ছে করোনায় মৃত্যু। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন আরো আটজন।
দেশে টিকাদান কার্যক্রম সফল হয়নি। টিকা সংগ্রহ করা নিয়ে চলছে লেজেগোবরে অবস্থা। ফলে বেশির ভাগ মানুষ এখনো অরক্ষিত। এ সময় যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে দেশে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় সংক্রমণ কমিয়ে রাখার জন্য লকডাউনের বিকল্প নেই। মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করাটাই বড় কথা। এর মাধ্যমে এক জায়গায় করোনাকে স্তিমিত করে দেয়া যেতে পারে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে লকডাউন জোরদার করতে হবে। এসব জেলায় সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা এবং কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সেরকম কোনো বৃহত্তর উদ্যোগ স্বাস্থ্য বিভাগের নেই। সরঞ্জামের অপ্রতুলতায় রোগী ব্যবস্থাপনাও কাক্সিক্ষত মানের নয়। ফলে পরিস্থিতি আবারো নাজুক হয়ে উঠবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। রাজশাহী মেডিক্যালে বেড সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক রোগীকে মেঝেতে রাখা হচ্ছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের পাশাপাশি এসব রোগীকে সিলিন্ডারের মাধ্যমেও অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। তবে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি বিধিনিষেধের আওতাধীন ১৩ জেলার চারটি বড় হাসপাতালে রোগীদের বেড দেয়া যাচ্ছে না। বেডের অপ্রতুলতা রয়েছে এমন হাসপাতালগুলো হলোÑ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল। রোগীর চাপ সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার বা নার্সও এসব হাসপাতালে নেই। পরিস্থিতি এমন যে, তৃতীয় ঢেউ সত্যি শুরু হলে নিছক ভাগ্যের ওপর ভরসা করা ছাড়া আমাদের কিছু করার থাকবে না।
previous post
next post