কষ্ট লাঘবে শীতার্তদের পাশে মাঠ প্রশাসন
বাংলাদেশ

কষ্ট লাঘবে শীতার্তদের পাশে মাঠ প্রশাসন

‘যে ঠান্ডা! চরত না আসলে বুঝবার নন ঠান্ডা কাক কয়। কয়দিন থাকি খুব কষ্ট করি থাকপার নাগচি। সরকারের কম্বল পায়া এলা একনা আরামে থাকপার পামো।’ কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ কম্বল পেয়ে এভাবে নিজের অনুভূতি জানান কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল চর ভগবতীপুর গ্রামের কর্মজীবী নারী বেলজন (৫০)। শুধু বেলজন নন, তার মতো শীতকষ্টে দিনাতিপাত করা ওই চরের প্রায় দুই শত নর-নারী সরকারি সহায়তা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তাদের কথায় ও আচরণে স্বস্তির ছাপ।

বেলজনের সঙ্গে শীতবস্ত্র ও খাদ্য সহায়তা পাওয়া আরেক শ্রমজীবী নারী আছিয়া বলেন,  ‘কয়দিন থাকি খুব কষ্ট করবার লাগছি। ঠান্ডাত কাজ কামাই করবার পাই না। সরকার থাকি যে চাউল-ডাইল দিছে তাতে খুব উপকার হইছে। আল্লাহ সবার ভালো করুক।’

বেলজন ও আছিয়ার মতো চলমান শীত মৌসুমে কনকনে ঠান্ডায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তরের নদ-নদী বিধৌত জেলা কুড়িগ্রামের লাখো মানুষ। বিশেষ করে, নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বর্ণানাতীত। শীতবস্ত্র ও রোজগারের অভাবে তাদের ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণ। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষের পাশে শীতবস্ত্র ও খাদ্য সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রামের  মাঠ প্রশাসন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার মূল ভূ-খণ্ডসহ চরাঞ্চলের মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করা হয়েছে। শীতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল, ডাল ও তেল দেওয়া হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকলেও শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে বিভিন্ন চরে শীতবস্ত্র ও খাদ্য সহায়তা হস্তান্তর করা হয়েছে। সদরের মোগলবাসা, হলোখানা, যাত্রাপুর ও ভোগডাঙা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কারও ঘরবাড়ির সমস্যা থাকলে তাদের সহায়তা হিসেবে টিন দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা, ভোগডাঙা ও যাত্রাপুর ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ইউনিয়নগুলোর ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী চরাঞ্চলের কয়েকশ’ মানুষকে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল ও আধা লিটার সয়াবিন তেল দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামসহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সশরীরে উপস্থিত থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র ও খাদ্য সহায়তা হস্তান্তর করছেন। এ ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও শীতার্তদের সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

ভোগডাঙা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে ইউনিয়নের চর মাধবরাম গ্রামে সহকারী কমিশনার নিজে উপস্থিত থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। ধরলা নদীর চরাঞ্চলের এই গ্রামে শতাধিক শীতার্ত মানুষ কম্বল পেয়ে সরকারের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘শনিবার দুপুরে কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল বাতাস উপেক্ষা করে ইউএনও স্যার ও পিআইও ব্রহ্মপুত্রের চরে গিয়ে প্রায় দুইশ’ শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল এবং খাদ্য সহায়তা হস্তান্তর  করেন। চরাঞ্চলের মানুষের শীতকষ্ট দেখে তারা আরও সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।’

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, ‘চরাঞ্চলের শীতের তীব্রতা শহরাঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। শীতে সেখানে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। এজন্য আমরা চরাঞ্চলের শীতবস্ত্রের পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। এমনকি সরকারি ছুটির দিনেও সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে সরকারের প্রচেষ্টার কমতি নেই।’ রবিবার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে সদরের হলোখানা ইউনিয়নে দুইশ’ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, চলমান শীতে প্রায় ৬৩ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা বিতরণ চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও শীতার্ত মানুষের গৃহসংস্কারের জন্য টিন এবং খাদ্য সহায়তার জন্য শুকনো খাবার রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো বিতরণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘আমরা গ্রামের শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র পৌঁছানো নিশ্চিত করছি। এ ছাড়াও শীতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি।’ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

Source link

Related posts

খুলনায় মৃত্যু কমেছে, দুই হাসপাতালে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে

News Desk

হিলি-বেনোপোলে ভিড়, ইমিগ্রেশনে হয়রানির অভিযোগ

News Desk

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

News Desk

Leave a Comment