কাঁঠাল আর কলা দিয়ে চিপস বানিয়ে বিক্রি করছেন তিন বন্ধু
বাংলাদেশ

কাঁঠাল আর কলা দিয়ে চিপস বানিয়ে বিক্রি করছেন তিন বন্ধু

শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি, কাঁঠাল আর কলা দিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে চিপস। রাঙামাটি শহরের আসামবস্তির কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেঁষে এই চিপস তৈরির কারখানা করেছেন তিন বন্ধু। আগামী মৌসুমে কারখানাটিতে আমের চিপস তৈরি করেও বাজারজাত করতে চান এই তিন উদ্যোক্তা।

তারা হলেন- আসামবস্তির বাসিন্দা সুবিমল চাকমা, শান্ত চাকমা ও প্রমথ চাকমা। ইতোমধ্যে কাঁঠাল আর কলা দিয়ে তৈরি চিপস বিক্রি শুরু করেছেন। এতে ভালো আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

তিন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমি ফল উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের সুখ্যাতি দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে পাহাড়ের আম, কাঁঠাল, আনারস ও বারোমাসি কলার কদর বেশি। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রতি বছর বাগানে ও পথে নষ্ট হয় মৌসুমি ফল। এতে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন কৃষকেরা। মৌসুমি ফলের অপচয় ঠেকাতে কাঁঠাল আর কলা দিয়ে চিপস তৈরির কথা ভাবেন এই তিন তরুণ উদ্যোক্তা। তাদের তৈরি পাহাড়ি কাঁঠাল ও কলার চিপস ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে বাজারে।

তিন তরুণ জানিয়েছেন, শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে হতে চেয়েছেন উদ্যোক্তা। সেই ভাবনা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেড়ার তৈরি ছোট একটি ঘরে স্থাপন করেন কারখানা। গত বছরের অক্টোবর থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। কারখানাটিতে তৈরি হওয়া এসব চিপস এরই মধ্যে এলাকায় সাড়া ফেলেছে।

উদ্যোক্তারা জানান, রাঙামাটিতে বছরে কলা উৎপাদন হয় কমপক্ষে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। বেশিরভাগ কলা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া হয়। সারা বছরই কলার উৎপাদন হয়, দেশজুড়ে চাহিদাও রয়েছে। একইভাবে রাঙামাটিতে কাঁঠালের উৎপাদনও কম নয়। প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে এক লাখ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। কিন্তু চাষিরা ন্যায্য দাম পান না বললেই চলে। দাম না পাওয়ায় অনেক সময় বাগানেই পচে নষ্ট হয়ে যায় কাঁঠাল। কলা ও কাঁঠালের চিপস বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে উৎপাদন করা গেলে কৃষকদের ন্যায্য দাম পাওয়ার যে প্রত্যাশা, তা পূরণ হবে বলে আশাবাদী এই তিন উদ্যোক্তা।

সরেজমিনে কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, চিপস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উদ্যোক্তা প্রমথ চাকমা এবং শ্রমিক রিটন চাকমা। তারা বলেন, আড়াই কেজি খোসা ছাড়ানো কলা থেকে ৩০ গ্রাম ওজনের ৩০ থেকে ৩৫ প্যাকেট চিপস তৈরি করা যায়। সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। শুরুতে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ প্যাকেট চিপস উৎপাদন করা হতো। এখন দিনে ৩০০ প্যাকেট উৎপাদন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে উন্নত মানের মেশিন বসিয়ে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার প্যাকেট চিপস তৈরির প্রস্তুতি ও চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের।

ইতোমধ্যে কাঁঠাল আর কলা দিয়ে তৈরি চিপস বিক্রি শুরু করেছেন

তিন বন্ধুর মধ্যে প্রমথ ও সুবিমল চাকমা কারখানায় সময় দেন। শান্ত চাকমা সৌদিপ্রবাসী। সুবিমল চাকমাই মূলত চিপস তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে আসছেন। কারখানায় বর্তমানে দুজন কর্মচারী রয়েছেন। তবে বাজারের চাহিদা বিবেচনায় কারখানার পরিসরের পাশাপাশি শ্রমিকও বাড়ানো হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা।

প্রমথ চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আম, কাঁঠাল, কলা ও আলুর চিপস তৈরির ভাবনা রয়েছে আমাদের। এর মধ্যে কাঁঠাল ও কলা আগে পাওয়ায় সেগুলো দিয়ে চিপস তৈরি শুরু করেছি। পরে ধাপে ধাপে বাকিগুলো তৈরি শুরু করবো। প্রতি কেজি কাঁঠাল থেকে ৩০০ গ্রাম চিপস উৎপাদন করা যায়। কোনও প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার না করে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চলছে উৎপাদন প্রক্রিয়া। তারপর প্যাকেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিপস দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মুখ। ৩০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট চিপস বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এখন ই-কমার্সের মাধ্যমে উৎপাদিত চিপস বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বড় পরিসরে কাজ শুরু করবো। আম দিয়ে চিপস তৈরির প্রস্তুতিও আছে। আগামী আমের মৌসুমে তা করবো।’

পাহাড়ি কাঁঠাল ও কলার চিপস ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে বাজারে

কারখানা স্থাপনে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানালেন প্রধান উদ্যোক্তা সুবিমল চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের চিপস তৈরির এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা গেলে পাহাড়ের কলা ও কাঁঠাল পচে আর নষ্ট হবে না। চাষিরাও ন্যায্য দাম পাবেন। আলু বা ভুট্টার চিপস সবাই খায়। কাঁঠাল ও কলার চিপস কখনও কেউ খেয়েছে? এই ভাবনা থেকেই আমাদের কাজ শুরু হয়। এজন্য ২০২২ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এরপর কারখানা স্থাপন করে চিপস উৎপাদন শুরু করি।’

সুবিমল চাকমা আরও বলেন, ‘পাহাড়ি কলা ও কাঁঠালের দাম পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবার সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই। কৃষক যেন উৎপাদিত ফলের সঠিক দাম পান, সেজন্যই আমাদের উদ্যোগ। আপাতত দুটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চিপস বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই চিপস বিদেশে রফতানির স্বপ্ন দেখছি আমরা। কারখানায় প্রতিদিন ৩০০ প্যাকেট চিপস উৎপাদন করা যায়।’

ফলের অপচয় ঠেকাতে কাঁঠাল আর কলা দিয়ে চিপস তৈরির কথা ভাবেন এই তিন তরুণ উদ্যোক্তা

কারখানার শ্রমিক রিটন চাকমা বলেন, ‘প্রথমে স্থানীয় বাজার থেকে কাঁঠাল ও কলা সংগ্রহ করা হয়। এরপর কারখানার দুই শ্রমিক এসব কাঁঠাল ও কলার খোসা ছাড়িয়ে নেন। কাঁঠাল ও কলা পরিষ্কারের পর ছোট ছোট পিস করে মেশিনে ভাজা হয়। ভাজার পর চিপসের তেল শুকানো হয়। এরপর প্যাকেটজাত করা হয়।’

এ ধরনের উদ্যোগ খুবই সম্ভাবনাময় এবং আমাদের জন্য সুখবর বলে উল্লেখ করেছেন রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছিম হায়দার। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এখানে আম, কাঁঠাল, আনারস ও কলা প্রচুর উৎপাদন হয়। বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক ফল বাগানেই নষ্ট হয়। সেই ফলের এমন বিকল্প ব্যবহার করা গেলে এই উদ্যোগ খুবই সম্ভাবনাময়। যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের স্বাগত জানাই।’

Source link

Related posts

আনসার-ভিডিপির এক প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ!

News Desk

ঘরে-বাইরে পানি, খাবারও নেই কুড়িগ্রামের বানভাসি মানুষের 

News Desk

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

News Desk

Leave a Comment