কাউন্সিলর আতিকের ৬ বাড়ির সন্ধান
বাংলাদেশ

কাউন্সিলর আতিকের ৬ বাড়ির সন্ধান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিকুর রহমানের চারটি বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সাড়ে সাত কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে। রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তার চারটি বহুতল ভবনসহ ছয়টি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে দুর্নীতি করে এই সম্পদ অর্জন করেননি বলে দাবি করছেন কাউন্সিলর আতিকুর রহমান। এমনকি ওনার নামে থাকা ছয়টি বাড়ির তথ্য অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তারাব পৌরসভার যাত্রামুড়া এলাকায় পাঁচটি ও দিঘীবরাব এলাকায় ছয় তলা নির্মাণাধীন একটি ভবন রয়েছে। যাত্রামুড়া এলাকায় চার শতাংশ জমির ওপর পাঁচ তলা ভবন, ছয় শতাংশ জমির ওপর টিনশেড বাড়ি, আড়াই শতাংশ জমির ওপর টিনশেড বাড়ি, তিন শতাংশ জমির ওপর দুই তলা ভবন, দিঘীবরাব এলাকায় ছয় শতাংশ জমির ওপর ছয় তলা নির্মাণাধীন একটি ভবন রয়েছে। 

যাত্রামুড়া নোয়াব স্পিনিং মিলের ভেতরে চার তলা একটি ভবন রয়েছে। তবে এর মধ্যে চার তলা ও দুই তলা ভবন দুটি পৈতৃক সম্পত্তি বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। আর আড়াই শতাংশ টিনশেড বাড়িটি তার নানির বাড়ির সম্পত্তি বলে স্বজনরা দাবি করেন। এ ছাড়া বাকি তিনটি বাড়ি আতিকুর রহমানের কেনা সম্পত্তি। তার আরও অনেক জমি ও সম্পদ আছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে সে বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রামুড়া এলাকায় ছয় শতাংশ টিনশেড বাড়িতে ১৫টি কক্ষ রয়েছে। আর বাড়ির সামনে তাসফিন স্টোর নামে শিঙাড়া-পুরির দোকান রয়েছে। দোকানি ও ভাড়াটিয়ারা সবাই জানালেন, এই বাড়ির মালিক কাউন্সিলর আতিকুর।

ভাড়াটিয়া স্বপ্না আক্তার বলেন, এটা আতিক কমিশনারের বাড়ি। আমি এই বাড়ির ভাড়াটিয়া। এখানে ১৫টি কক্ষ রয়েছে। টিনশেড কক্ষ ২৫০০ ও মধ্যেখানে দুটি পাকা কক্ষ ৩৫০০ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

একই এলাকায় তার নামে পাঁচ তলা ভবন রয়েছে। সেই বাড়ির ভাড়াটিয়া রফিক মিয়া বলেন, আমি এই পাঁচ তলা ভবনের ভাড়াটিয়া। এটা আতিক কাউন্সিলরের বাড়ি। এখানে সাড়ে তিন হাজার টাকায় একটি কক্ষ ভাড়া দিয়ে থাকি। তিনি চার বছর আগে এই বাড়িটি কিনেছিলেন বলে জানতে পেরেছি।

পার্শ্ববর্তী দিঘীবরাব এলাকায় তার ছয় তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। ওই ভবনের ম্যানেজার আক্তার হোসেনের মা আমেনা বেগম বলেন, আমি দুই বছর ধরে এ বাড়িতে ভাড়া থাকি। আমার ছেলে এ বাড়ির ম্যানেজার। বাড়িটির তিন তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ওপরে আরও কয়েক তলার ছাদ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া যাত্রামুড়া এলাকায় আড়াই শতাংশ জমিতে টিনশেড বাড়িটি কাউন্সিলর আতিকুর রহমানের বলে জানিয়েছেন ভাড়াটিয়া ও স্থানীয়রা। তবে ওই বাড়িটি তার মায়ের নামে বলে দাবি করেছেন আতিকুর রহমান। আর ওই এলাকার মূল সড়কের পাশে দুই তলা একটি ভবন রয়েছে। সেই ভবনটি তার পিতার নামে রয়েছে বলে জানা গেছে। একইভাবে ওই এলাকার নোয়াব স্পিনিং মিলের ভেতরে চার তলা একটি ভবন রয়েছে। সেই ভবনটি তার পিতার নামে বলে দাবি করেছেন কাউন্সিলর নিজে। তবে ওই বাড়ির বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে স্পিনিং মিলের নিরাপত্তাকর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি।

কাউন্সিলর আতিকের ৬ বাড়ির সন্ধান

এ বিষয়ে মিলের নিরাপত্তাকর্মী রাম মোহন বিশ্বাস বলেন, আতিক সাহেব এখানকার কমিশনার। তিনি মাঝে মাঝে এখানে আসেন। এটা ওনার বাপ-দাদার বাড়ি। বাড়িটি চার তলা। এই বাড়িতে ওনার মা বসবাস করেন। তবে অনুমতি ছাড়া কাউকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। এই মিলটি ওনার বাপ-দাদার।

কাউন্সিলরের পাঁচটি বাড়ি আছে উল্লেখ করে তার চাচা ওসমান আলী ভূঁইয়া বলেন, আমার ভাতিজা পৈতৃক সূত্রে অনেক সম্পত্তির মালিক। তার বিরুদ্ধে কেন দুর্নীতির মামলা হবে। এটা আমার জানা নেই। এ ছাড়া আরও কয়েকটা বাড়ি কিনেছে। ভাতিজার পাঁচটা বাড়ি আছে। সে সুতার ব্যবসা করে। তার বাবার স্পিনিং মিল রয়েছে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েছেন আতিকুর রহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাকে কোনও নোটিশ বা নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে আমার প্রত্যেকটি বাড়ির ট্যাক্স ফাইল রয়েছে। আমি কোনও দুর্নীতি করিনি।

ছয় বাড়ি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছয়টি বাড়ির মধ্যে আমার নামে রয়েছে তিনটি। আর দুটি আমার পিতার নামে। এ ছাড়া একটি আমার মায়ের নামে। টিনশেড বাড়িটি পাঁচ শতাংশ। আর ছয় তলা ভবনটি চার শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত। দিঘীবরাব এলাকায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর ছয় তলা ভবনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। এই তিনটি আমার কেনা সম্পত্তি। এই তিনটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আমি পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করি।

কাউন্সিলর আতিকের ৬ বাড়ির সন্ধান

বিরোধের কথা উল্লেখ করে দাবি করেন, তারাব পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুব খানের সঙ্গে আমাদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। তার মিলের ভেতরে আমার বাবার দুই বিঘা জমি রয়েছে। এ নিয়ে তার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এর জেরে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।

এর আগে, গত রবিবার (৭ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমানের চারটি বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।

দুদকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, একটি ছয় তলা, দুটি চার তলা ভবন ও একটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে। কাউন্সিলর আতিকুরের তারাবতে চার শতক জমির ওপর নির্মিত চারতলা বাড়ি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। জমি কেনা হয়েছিল ২০১২ সালে। তারাবতে জব্দের আদেশ দেওয়া ছয় তলা বাড়িটির সাড়ে সাত শতক জমি কেনা হয় ২০১৯ সালে। তার স্পিনিং মিলটি ৩৮ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। সেই চার তলা ভবনও জব্দের জন্য বলা হয়েছে। এর জমি কেনা হয় ২০২০ সালে। এ ছাড়া তারাবতে আরেকটি টিনশেড বাড়ির পাঁচ শতক জমি কেনা হয় ২০১৯ সালে।

দুদকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে তারাব পৌরসভায় আতিকুর ২৮ শতক জমি কেনেন। পরের বছর (২০১৮ সাল) তিনি তারাব এলাকায় আরও চার শতক জমি কেনেন। একই বছর আতিকুর আরও দেড় শতক জমি কেনেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের নারায়ণগঞ্জের কার্যালয়ের উপ পরিচালক মইনুল হাসান রওশানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে চারটি বাড়ি জব্দ করার তথ্যটি জানতে পেরেছি। তবে এখনও আদালতের আদেশের কাগজ আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Source link

Related posts

সমন্বয়ক আবুল হাসনাত সভায় আজও হট্টগোল

News Desk

আচরণবিধি ভেঙে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর শোডাউন 

News Desk

চট্টগ্রামে ৬ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি

News Desk

Leave a Comment