মাত্র ৩০ সেকেন্ড হাঁটলেই পদচারী সেতু। কিন্তু এই পথটুকু পাড়ি দেওয়ার ধৈর্য্য ও সময় যেন কারও নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি ট্রেনের ভেতর দিয়ে এসে রেললাইনে নেমে আরেকটি ট্রেনে ওঠেন। সেই ট্রেনে লাফিয়ে উঠে সেটাও পার হন। তারপর স্টেশনে প্রবেশ করতে থাকা আরেকটি ট্রেনের সামনে দিয়ে দৌড় দিয়ে ওঠেন চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে।
কুমিল্লা স্টেশনের পদচারী সেতুর নিচে যাত্রীদের এমন পারাপারের দৃশ্য নিয়মিত দেখা যায়। যারা ঘুরতে আসে তারা ছাড়া কেউ পদচারী সেতুতে সচরাচর ওঠে না। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেকটি প্ল্যাটফর্মে চলাচলে দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্টেশনে আসা অধিকাংশ ব্যক্তি ঝুঁকি নিয়ে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক প্ল্যাটফর্মে চলাচল করে। অনেক নতুন যাত্রী পদচারী সেতু আছে কিনা খেয়ালই করেন না। শিশুদেরও ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে দেখা গেছে।
মনোয়ারা বেগম নামে একজন নারী বলেন, ‘আমডা হাঙ্গাদিন (সারাদিন) আই। আমডার কিচ্ছু ওইতোনা। বিরিজ-মিরিজ এগ্লা আমডার দরকার নাই।’
মো. জিলানী নামের পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি বলেন, ‘আসলে এত দূর দিয়ে ব্রিজ পার হয়ে ওই পাশে যাওয়াটা বেশি কষ্টের মনে হয়। তাই যাই না।’
কুমিল্লা স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘদিন ধরে চানাচুর মুড়ি বিক্রি করেন আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তেমন কেউ এই ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে না। এখানে কেউ ঘুরতে আসলে তারা ব্রিজে উঠে দেখে।’
চট্টগ্রামগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেসের যাত্রী রবিউল আলম বলেন, ‘আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম। যদি বৃদ্ধ লোকটাকে মানুষ না ধরতো সে নিশ্চিত কাটা পড়তো।’
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরব আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যতটুকু পারছি সচেতন করছি। যদি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন না হয় তাহলে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সব সময় আমাদের নজরে থাকে না। হঠাৎ যাত্রীরা নেমে যান।’
রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, ‘এত সুন্দর ফুট ওভারব্রিজ অথচ মানুষ তা ব্যবহার করে না। এটা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। কীভাবে সবাইকে সচেতন করা যায়, আমরা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি।’