খরা মৌসুমে পানির চাহিদা মেটাতে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার চিরির খালের ওপর ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এটি কোনও কাজে আসছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ। অধিকাংশ সময় অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। এতে পানির চাহিদা মেটানো দূরের কথা, কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই স্লুইসগেট। পানিশূন্য ওই খালের ভাঙন রোধে পাড়ের দুই পাশে নতুন করে বসানো হচ্ছে সিসি ব্লক, যা অপচয় ছাড়া কিছুই নয় বলে দাবি কৃষকদের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিরামপুর উপজেলার ২ নম্বর কাটলা ও ৬ নম্বর জোতবানী ইউনিয়নের জোতবানী ও শৈলান গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে চিরির খাল। খরা মৌসুমে ওই এলাকার আবাদি জমিতে পানি সঙ্কট দেখা দেয়। তাই পানির চাহিদা মেটাতে চিরির খালের ওপর স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়।
২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে এলজিইডি’র অর্থায়নে ‘চিরির খাল ডব্লিউআরএস নির্মাণ’ প্রকল্পে ৪৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ব্যয়ে স্লুইসগেটটি নির্মাণ করা হয়। ফরিদপুরের নজরুল ইসলাম নামের একজন ঠিকাদার কাজটি করেন। গেটের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। প্রথম দিকে বছর দুয়েক এটি খোলা ও বন্ধের কাজ চললেও, এরপর থেকে পুরোপুরি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে ওই খালে হাঁটুপানি। এতে খালের পাড় ভাঙার কোনও আশঙ্কা নেই। এরপর আবারও ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে গেটের দুই পাড়ে সিসি ব্লক বসানোর কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক নাজমুল হক বলেন, ‘চিরির খালের ওপর একটা স্লুইসগেট করা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, এটা দিয়ে এর আশপাশের কৃষকদের জমির পানির চাহিদা মিটবে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে দেখা যাচ্ছে, এটা আমাদের উপকার তো দূরের কথা, ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খাল থেকে বর্ষার সময় যেভাবে পানি নেমে যেতো, স্লুইসগেটের কারণে এখন আর সেভাবে নামে না।’
কৃষক সুজন হোসেন বলেন, ‘ স্লুইসগেট আমাদের কোনও কাজেই আসছে না। এখানে তো পানি থাকে না। এরপরও এখানে নতুন করে ব্লক বসানো হচ্ছে, এটার কোনও দরকার নেই।’
আরেক কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এই স্লুইসগেট করায় আমাদের সুবিধার পরিবর্তে অসুবিধাই বেশি হয়েছে। উত্তরে আমাদের যে বিলগুলো রয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যে পানি হয়, তা এর ওপর দিয়ে চলে যায়, এই গেট খুলতে না পারার কারণে। মরা খালের ওপর এটা করে কী উপকার হয়েছে?’
সেলিম হোসেন বলেন, ‘ওই এলাকায় আমার দুই একর জমি রয়েছে। আমি সেই জমিতে আবাদ করতে পারি না। স্লুইসগেট আটকা থাকার কারণে জমিতে বন্যার পানি জমে থাকে।’
বিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘স্লুইসগেট মেরামতসহ এটির সবকিছু আমরা ঠিকঠাক করে দিচ্ছি। বর্ষার সময় এলে সেখানে কৃষকরা পানি আটকে রাখবেন। আবার খরা মৌসুমে সেই পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করবেন।’