কাটলো গুজব-আতঙ্কের রাত, পাহাড় অশান্তের নেপথ্যে কাদের হাত?
বাংলাদেশ

কাটলো গুজব-আতঙ্কের রাত, পাহাড় অশান্তের নেপথ্যে কাদের হাত?

চরম আতঙ্ক আর উদ্বেগের মাঝে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে খাগড়াছড়িবাসী। সারা রাত ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ, আগুন দেওয়া, গোলাগুলি, হত্যার মতো বিভিন্ন পোস্ট দেখেছে পাহাড়বাসী। এসব পোস্ট দেখে বেশির ভাগ মানুষই ছিলেন ঘুমহীন। সবাই নিজের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য রেখেছেন পূর্বপ্রস্তুতি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল জেলার প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।

তারপরও কেন এত গুজব রটানো হলো সামাজিক মাধ্যমে? এ সম্পর্কে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার সম্পাদক মো. মাসুম রানা বলেন, ‘এর নেপথ্যে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল, রাষ্ট্রের পরাজিত শক্তি ও ভূ-রাজনীতি জড়িত। সারা রাত ধরে অনেকে মিথ্যা ও উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে তরুণ ও যুবকদের ঘর থেকে বের করে এনে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চেয়েছে।’

এইচ এম ইউছুফ আলী নামের পানছড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো খাগড়াছড়িতে। এর জেরে সংঘর্ষ হলো ২৬ থেকে ২৭ কিলোমিটার দুরের দিঘীনালায়। আর আমাদের দোকান পোড়ানো হলো ঘটনাস্থল ২৫ কিলোমিটার দূরের পানছড়িতে। এর আগে পাহাড়ি যুবকরা পানছড়ি ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। সেনাবাহিনীর টহল টিমকে আটকে রাখে। গুজব পোস্টের কারণে রাতে আর ঘুমাতে পারলো না পুরো জেলাবাসী।’

প্রকৃত ঘটনার পেছনে কারা? তারা কী করতে চাচ্ছে? এসব প্রশ্নের সমাধান করার জন্য তিনি সরকার ও প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।

খাগড়াছড়ি সদরের বাসিন্দা রোমেল চাকমা জানান, আতঙ্কে সারা রাত ঘুমাতে পারেননি তারা। গুজব ও ফেসবুকের পোস্ট দেখে সবাই আতঙ্কিত ছিলেন। বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া পর্যন্ত বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে কারা ফায়দা লুটতে চায়, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

রহিম হৃদয় নামে খাগড়াছড়ি সদরের আরেক বাসিন্দা জানান, দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে পাহাড় নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি এই ফাঁদে পা না দিতে সকলকে অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা, নেপথ্যে কারা এবং কী হয়েছে বা হচ্ছে সব কিছু এই ডিজিটাল যুগে গোপন করা যাবে না। সব কিছুই পরিষ্কার করা হবে। যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানি দিচ্ছে তাদেরও শনাক্ত করা হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শক্তহাতে সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আগুনে পুড়ছে দোকানপাট

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘এই ঘটনার নেপথ্যে কারা আছে, তা বের করা হবে। দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে তার আগে গতকালকের ঘটনায় যাতে আর অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে, সেজন্য এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা সভা করা হবে।’ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অহেতুক গুজব না ছড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধও জানান জেলা প্রশাসক।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে খাগড়াছড়ির মামুন হত্যার প্রতিবাদে এদিন বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও কলেজগেট এলাকায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর পরপরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশিদ জানান, এ ঘটনায় পাঁচ জন আহত হয়েছেন। আগুনে ৬০টি দোকান সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। সংঘর্ষ ও অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাস সিলিন্ডার

উল্লেখ্য, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়াপাড়ার নিউজিল্যান্ড এলাকায় মামুন নামের এক যুবককে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে দীঘিনালা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেছিল।

এদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় হামলা, ঘরবাড়ি-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর হামলা চালালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করছে। এ হামলা এখনও অব্যাহত রযেছে। ফলে কত সংখ্যক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তার বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।’

বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে হামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

Source link

Related posts

শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেল

News Desk

অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়ন তুলে ধরতে সিএনএনের সঙ্গে চুক্তি বাংলাদেশের

News Desk

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চট্টগ্রামের ষোলশহর

News Desk

Leave a Comment