‘আমার ছোট ছেলে উৎপলকে এনে দাও, আমার ছেলে এভাবে মরতে পারে না।’ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় শিক্ষক উৎপলের বাড়িতে এভাবেই বিলাপ করে কাঁদছিলেন মা গীতা রানী। ছেলের মৃত্যু তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। বুধবার (২৯ জুন) সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামের প্রভাষক উৎপলের বাড়িতে গিয়ে এমন অবস্থা দেখা যায়।
ছাত্রের মারধরে সোমবার (২৬ জুন) চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উৎপল।
তার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় বড়ভাই অসীম কুমারের সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, আমার ভাইকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও যারা জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। তিনি আরও বলেন, উৎপল আমার ছোট হলেও পরিবারের যেকোনও সিদ্ধান্ত সেই নিতো। আমরা এখন উৎপলকে হারিয়ে খুব কেষ্টে আছি। উৎপল আমাদের দুই ভাইকে দর্জির দোকান করে দিয়েছিল। আজ সেই ভাই আমাদের মাঝে নেই, এটা মেনে নিতে পারছি না।
শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা: প্রধান অভিযুক্ত গ্রেফতার
উৎপলের স্ত্রী বিউটি রানী নন্দী বলেন, আমাদের বিয়ের বয়স তিন বছর। বিয়ের পর উৎপলকে ছাড়া আমি একদিনও থাকিনি। উৎপল কাজ ছাড়া কিছুই বুঝতো না, আমি তাকে বলেছিলাম তুমি ক্লাস ছাড়া আর কোনও দায়িত্ব নিও না। কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। কলেজ থেকে তাকে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। উৎপলও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। তাহলে কেন আমার স্বামীকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উৎপলের শাশুড়ি ছবি রানী নন্দী বলেন, তিন বছর হলো উৎপলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তবে তাদের সংসারে কোনও সন্তান নেই। এখন আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো। যারা আমার মেয়েকে বিধবা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই।
শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা, মামলায় কিশোর বললেও ছাত্রের বয়স ১৯
উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, উৎপল খুব ভালো ছেলে ছিল। এলাকার লোকজনের সবসময় খোঁজ রাখতো। তার এই অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা: সেই ছাত্রের বাবা রিমান্ডে
প্রসঙ্গত, শনিবার (২৫ জুন) হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। শিক্ষক উৎপল কুমার মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু মাঠ থেকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে আহত শিক্ষককে দ্রুত উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে এনাম মেডিক্যালে আইসিইউতে রাখা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই নিহত শিক্ষকের ভাই অসীম কুমার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় স্কুলছাত্রকে প্রধান আসামি ও আরও তিন-চার জনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আশরাফুল আহসান জিতু ও তার বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।