দীর্ঘ ১৩২ দিন পর চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। জেলেরা আহরণ করা মাছ ছোট ছোট বোটে করে নিয়ে আসছেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) অবতরণ ঘাটে। রাতভর আহরণ করা মাছ নিয়ে ঘাটে নিয়ে এসেছেন তারা। তবে, প্রথম দিনের মাছের আকার ছোট হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। বিএফডিসির আশা, গত বছরের চেয়ে এবারও রাজস্ব আহরণ বেশি হবে।
বিএফডিসি সূত্র মতে, প্রথম দিনের শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪০,০০০ কেজি (৪০ মেট্রিক টন) মাছ আহরণ হয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ৮ লাখ টাকার কিছু বেশি। গত বছর জেলার চারটি অবতরণ কেন্দ্রে ৫ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
দীর্ঘদিন পর অবতরণ ঘাটটিতে এখন ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। শ্রমিকরা ব্যস্ত একের পর এক বরফ ভাঙতে। অবতরণ করা মাছ সরকারি রাজস্ব মিটিয়ে ড্রামে প্যাকিং শেষে ট্রাকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যার গন্তব্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ব্যবসায়ী, শ্রমিকদের হাঁকডাকে চিরচেনা রূপে ফিরেছে ঘাটটি।
কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ২০ এপ্রিল থেকে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে পানি কম থাকায় নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয় আরও দুই দফায়। তবে বিলম্বে হলেও মাছ ধরা শুরু হওয়ায় খুশি জেলেরা। প্রথম দিনে চাপিলা ও কাচকি মাছের আধিক্য থাকলেও, তেমন দেখা মেলেনি কার্প জাতীয় মাছের। এসব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
জেলে মধু সেন দাস ও বিমল দাস বলেন, ‘দীর্ঘদিন বেকার সময় কেটেছে। অনেক সময় তিন বেলা খেতে পারিনি। বউ বাচ্চা নিয়ে কষ্টে দিন কেটেছে। মাছ ধরা খুলে দিয়েছে। আমরাও হ্রদে মাছ শিকারে নেমেছি। এখন পর্যন্ত ভালো মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা জেলেরা খুবই খুশি। তবে চাপিলা মাছটি এবার আকারে কিছুটা ছোট।’
প্রথমদিনেই কাচকি, চাপিলার আধিক্য ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আকারে ছোট হওয়ার হতাশ ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে দীর্ঘ ১৩২ দিনের বেকার সময় কাটিয়ে কাজে ফিরে খুশি শ্রমিকরা।
মাছ ব্যবসায়ী মাহফুজ উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ব্যবসা শুরু করলেও হ্রদে পানির বেশি থাকায় মাছের পরিমাণ কম এবং আকারও কিছুটা ছোট। আমার আশা করছি আগামীতে আরও বেশি মাছ পাবো।’
অন্য আরেক ব্যবসায়ী তারেক মাসুদ জানান, প্রচুর মাছ আসছে ঘাটে, কিন্তু মাছের আকার ছোট। এই মাছ বিক্রি করা কঠিন হবে।
বিএফডিসি রাঙামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রথমদিনের মতো এভাবে মাছ ধরা অব্যাহত থাকলে গত বছরের চেয়ে রাজস্ব আয় বেশি হবে বলে আমরা আশাবাদী। প্রথম দিকে জালে ছোট মাছ বেশি আসে। কয়েকদিন পর এটি স্বাভাবিক হয়ে যায়। হতাশ হওয়ার কিছুই নেই।’