কার দখলে লঞ্চের কেবিন?
বাংলাদেশ

কার দখলে লঞ্চের কেবিন?

‘আগে এসে বা স্লিপ জমা দিয়ে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের কেবিন কোনওভাবেই সাধারণ যাত্রীদের ভাগ্যে জোটে না। ঈদ কিংবা অন্যান্য সময় কেবিন নিতে প্রভাবশালী অথবা ক্ষমতাবানদের দ্বারস্থ হতে হয়। এরপরই জোটে সোনার হরিণ নামক লঞ্চের কেবিন। এ অবস্থা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে’— বলছিলেন বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডের বাসিন্দা সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। তার দাবি, সাধারণ যাত্রীদের নিয়েই লঞ্চ কোম্পানিগুলোর ব্যবসা। তারা যাতে লঞ্চের কাউন্টার থেকে সরাসরি কেবিন পেতে পারে তার একটা ব্যবস্থা করা দরকার।

নগরীর কাউনিয়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, কেবিন পেতে সাধারণ যাত্রীদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঈদে ঢাকা থেকে বরিশাল আসার জন্য লঞ্চ কোম্পানি থেকে তারিখ এবং মোবাইল নম্বর লিখে স্লিপ জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন কেবিন সংগ্রহ করতে যাই তখন দেখা যায় তাদের ‘জাদুর খাতায়’ সাধারণ যাত্রীদের নাম নেই। জাদুর খাতা বলেছি এ কারণে ওই খাতায় কয়েকরকম কালি দিয়ে যাত্রীদের নামে কেবিন দেওয়া হয়। কিন্তু কোনটা সঠিক আর কোনটা তাদের মতো করে রেখেছে তা বোঝা মুশকিল।

তিনি বলেন, পেন্সিলের লেখা বারবার মোছামুছি করা হয়। এছাড়া স্বাভাবিক কালি দিয়ে লেখার কেবিনগুলো থাকে নামিদামি ব্যক্তিদের। অনেক সময় তাদের নাম ব্যবহার করে লঞ্চের স্টাফরা তা রেখে দেয়। সময়মতো সেগুলো আবার বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান এবং রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরের লোকজনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সাধারণ যাত্রীরা আর কেবিন পান না।

ঈদকে সামনে রেখে সোমবার (১৮ এপ্রিল) থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের কেবিন দেওয়া শুরু হবে। কিন্তু রোজা শুরুর পর থেকেই সাধারণ যাত্রীরা তাদের পরিচিত প্রভাবশালীদের আগেভাগেই কেবিনের কথা বলে রেখেছেন। তারাই স্লিপ জমা দিয়ে কেবিন সংগ্রহ করে দিচ্ছেন।

নগরীর কাউনিয়ার বাসিন্দা সোয়াইব সাকির বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ বাড়ছে। বাড়ছে কেবিনের সংখ্যাও। লঞ্চ কোম্পানি সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে ব্যবসা করছে অথচ তারা কাউন্টার থেকে সরাসরি দেয় না। কাউন্টারে গেলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় কেবিন নেই। অথচ আমাদের সামনে থেকে অন্যরা কেবিন কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র থেকে জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ঈদে যাত্রীবহরে থাকছে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল লিফটযুক্ত সুন্দরবন-১০, সুরভী-৯, কীর্তনখোলা-২, কীর্তনখোলা-১০, পারাবত-১২, ফারহান-৮, টিপু-৭, প্রিন্স আওলাদসহ ১৮টি লঞ্চ। এসব লঞ্চে সিঙ্গেল, ডাবল, ভিভিআইপি, ভিআইপি, সেমি-ভিআইপি, সৌখিন, ফ্যামিলি কেবিন রয়েছে আড়াই হাজারের অধিক। এ কেবিন পেতে এখন চলছে প্রতিযোগিতা।

এদিকে বরিশাল নৌ বন্দরে একটি দালাল চক্রের হাতে রয়েছে সকল লঞ্চের কেবিন। সংকট মুহূর্তে ওই কেবিন অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হয়। আর ঈদে সেই কেবিনের দাম হয়ে যায় ডাবল। যারা কোনওভাবেই কেবিন সংগ্রহ করতে পারেন না তাদের ভরসা কালোবাজারি। অভিযোগ রয়েছে লঞ্চ কোম্পানিগুলোতে কেবিনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে আঁতাত করেই কেবিন সংগ্রহ করছে ওই দালাল চক্র। এতে তাদেরও একটি পার্সেন্টিজ থাকে।

এ ব্যাপারে কীর্তনখোলা লঞ্চের জেনারেল ম্যানেজার বেল্লাল হোসেন বলেন, স্বাভাবিক দিনগুলোতে সাধারণ যাত্রীদের কেবিন দেওয়া হয়। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কেবিন দেওয়া হচ্ছে। যারাই এসেছেন তাদের কেবিন দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সুন্দরবন লঞ্চের পরিচালক আকতার হোসেন বলেন, আগেভাগে স্লিপ জমা নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কেবিন বণ্টন করা হবে। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাবান যাচাই করা হয় না।

কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, এ বছর কেবিনের কোনও সংকট হবে না। প্রথম দিকে হাহাকার থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই হাহাকার আর থাকে না। তাছাড়া নতুন নতুন লঞ্চ নামায় এ সংকট অনেকটা দূর হয়েছে। তারপরও ঈদে ঘরমুখো মানুষের বেশি চাপ থাকলে ডাবল ট্রিপ দেওয়া হবে। তাতে করে কেবিনের আহামরি সংকট থাকবে বলে দাবি করেন তিনি।

বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য বরিশাল-ঢাকা ও ভায়া রুটে ২৮টি বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করবে। ওই সকল লঞ্চে চার হাজারের বেশি কেবিন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ পড়বে। ওই সময় থেকে প্রতিদিন ১০টি কোম্পানির লঞ্চ ঢাকা থেকে বরিশাল ছেড়ে আসবে। যাত্রীদের চাপ মাত্রাতিরিক্ত হলে বিশেষ সার্ভিসে ডাবল ট্রিপ করা হতে পারে। তবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। 

Source link

Related posts

একরাম হত্যা মামলা: ৪ বছরেও হয়নি আপিলের নিষ্পত্তি

News Desk

‘গরিবের সবজি গাড়িতে উঠলেই ধনীর হয়ে যায়’

News Desk

মুহুরি নদীর বাঁধে তিন স্থানে ভাঙন, ১১ গ্রাম প্লাবিত

News Desk

Leave a Comment