কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ১২৭ বিডিআর সদস্য
বাংলাদেশ

কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ১২৭ বিডিআর সদস্য

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিনের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২৭ জন বিডিআর সদস্য কারামুক্ত হয়েছেন। তাদের মুক্তির যাবতীয় কাগজপত্র কারাগারে আসার পর যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোনও মামলায় আটকাদেশ না থাকায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট কারাগারের জেল সুপার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জন, বেলা সাড়ে ১১টায় কারাগার-১ থেকে ২৫ জন এবং দুপুর দেড়টায় কারাগার-২ থেকে ৮৯ জনকে কারামুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের মুক্তির খবরে সকাল থেকেই তাদের স্বজনরা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় জামিনে মুক্তি পাওয়াদের পরিবারের সদস্যদের কান্না ও আহাজারিতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়!

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০ এ কারাগারের ১২৮ জন বন্দি বিডিআর সদস্যদের মধ্যে ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

কাশিমপুর কারাগার-১-এর জেল সুপার মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টায় এ কারাগারের ৮৪ জন বন্দির মধ্যে ২৫ জনকে কারামুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

কাশিমপুর কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার আল মামুন বলেন, ‘দুপুর দেড়টায় এ কারাগারের ৩৭৮ জন বন্দির মধ্যে ৮৯ জনকে কারামুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

জামিনে মুক্তি পাওয়া ময়মনসিংহ ৪৫ ব্যাটালিয়নের সিপাহি এনামুল বলেন, ‘আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটাইছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। আমরা যারা নিরপরাধ ছিলাম তাদের সবাইকে পুনরায় চাকরিতে বহাল করার দাবি জানাচ্ছি। সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। এ ঘটনায় যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিডিআর বিদোহের বিষয়ে আমাদের কোনও কিছু বলা হয়নি। শুধু বলেছে সাক্ষী দিতে হবে। কার নামে সাক্ষী দিতে হবে আমরা কিছুই জানি না। সাক্ষী দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাদের মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার।’

সদ্য মুক্তি পাওয়া ঢাকা সদর ব্যাটালিয়নের সিপাহি আবু হাসান বলেন, ‘যখন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে তখন আমার চাকরির বয়স ছয় মাস। পিলখানাতে পাঁচটি গেট আছে, সেই পাঁচটি গেটই আমি চিনতাম না। অথচ আমাকে করা হয়েছে আসামি। যেসব সিনিয়র স্যারদের আমরা পিতৃসমতুল্য সম্মান করতাম আজকে তাদের হত্যার দায়ে আমাদের ১৬টি বছর মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করতে হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমরা যেন আমাদের হারানো সম্মান ফিরে পাই।’

ঢাকা সদর ব্যাটালিয়নের আরেক সিপাহি জামাল উদ্দিন খানের মেয়ে জুয়েনা জামাল ঐশী বলেন, ‘আমার বাবাকে আমি চিনি না। বড় হয়ে শুনেছি, আমার বয়স যখন এক বছর তখন আমার বাবাকে বিডিআর হত্যা মামলায় আসামি করে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাবার মুখ দেখতে পারবো। এই অনুভূতির কথা বলে শেষ করা যাবে। কোনোদিন বাবার আদর পাইনি। আজ মনভরে বাবাকে দেখবো।’ জুয়েনা জামাল ঐশী যখন কথাগুলো বলছিলেন তার চোখের পানি টলমল করে গাল বেয়ে পড়ছিল।

প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ও যাদের বিরুদ্ধে কোনও আপিল হয়নি এমন দুই শতাধিক আসামি। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার অস্থায়ী আদালত তাদের এই জামিন দেন।

Source link

Related posts

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইইউর রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ, যে আলোচনা হলো

News Desk

জমিতে বালু রাখতে বাধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষের ‘ধাক্কায়’ বৃদ্ধের মৃত্যু

News Desk

কক্সবাজারের ইনানীতে পর্যটকদের জন্য চালু হলো ‘কায়াকিং’

News Desk

Leave a Comment