কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী মোটরমালিক সমিতির ‘একচেটিয়া’ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সড়ক অবরোধ করে বাস চলাচল বন্ধ রাখে কুড়িগ্রাম মোটরমালিক সমিতি ও মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন। ফলে জেলা থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করা যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে দূরপাল্লার বাস আড়াআড়ি রেখে অবরোধ করেন বাসশ্রমিকরা। তারা সব ধরনের যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন। ফলে কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পরে সাধারণ মানুষ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে উত্তেজিত মোটরশ্রমিকদের বেপরোয়া অবরোধে কুলিয়ে উঠতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ট্রাফিক পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পলাশবাড়ী মোটরমালিক সমিতি অন্যায়ভাবে কুড়িগ্রামের গাড়ি যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করছে। ঈদের আগে এ ধরনের সমস্যা সাধারণ মানুষকে পেরেশানিতে ফেলেছে। এর প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম মোটরমালিক ও শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
কুড়িগ্রাম মোটরমালিক সমিতির সড়ক সম্পাদক রায়হান কবির বলেন, ‘পলাশবাড়ী মোটরমালিক সমিতির অন্যতম সদস্য ও পলাশবাড়ী পৌর মেয়র গোলাম সরোয়ার বিপ্লব কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাস পলাশবাড়ীতে আটকে দিচ্ছেন। আমাদের শ্রমিকদের হেনস্তা করছেন। এর প্রতিবাদে আমরা মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি। একই সঙ্গে আমাদের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে পলাশবাড়ী মালিক সমিতির অন্যায় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা জেলা থেকে কোনও দূরপাল্লার বাস ছাড়বো না।’
তবে পলাশবাড়ী মোটরমালিক সমিতির সদস্য ও পলাশবাড়ী পৌর মেয়র বিপ্লব তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছি না।’ সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিজের দায় এড়াতে পারেননি মেয়র বিপ্লব। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে আমাদের একটি বাস চলাচল করবে। কিন্তু কুড়িগ্রাম মোটরমালিক সমিতি তা দিতে নারাজ। তারা রাজি হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
বিপ্লবের এই দাবির বিষয়ে কুড়িগ্রাম মোটরমালিক সমিতির সড়ক সম্পাদক রায়হান কবির বলেন, ‘তাদের (পলাশবাড়ী মোটরমালিক সমিতি) গাড়ি প্রবেশে আমাদের পক্ষ থেকে নয়, রংপুর মোটরমালিক সমিতি থেকে আপত্তি রয়েছে। তার (বিপ্লবের) দাবি সঠিক নয়। আমাদের গাড়ি চলাচলে বাধা দিলে আমরা গাড়ি ছাড়বো না।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ৮টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত ছিল।