কুমিল্লায় বন্যা: রাত জেগে বেড়িবাঁধ পাহারা
বাংলাদেশ

কুমিল্লায় বন্যা: রাত জেগে বেড়িবাঁধ পাহারা

মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। শহরে তখন মধ্যরাত। কিন্তু গোমতীপাড়ে রাত নামেনি তখনও। যেন অনিশ্চয়তার আলোয় জেগে আছে কতগুলো আতঙ্কিত মুখ! মধ্যরাতেও নদীপাড়ে জ্বলছে বাতি। কারও হাতে টর্চ, কারও মশাল। কেউবা মোবাইলের টর্চের আলো হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে। সবার নজর গোমতীর বাঁধের দিকে। গোমতীপাড়ের সব বয়সী মানুষের সঙ্গে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীরাও।

জানা গেছে, সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। সেখানকার খোয়াই নদের পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩১ বছর পর মধ্য ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিশাল জলাধার ডুম্বুরের (৪১ বর্গকিলোমিটার) ‘স্ল্যাপ গেট’-এর তিনটির মধ্যে একটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এর জেরে গোমতীর বাংলাদেশের অংশ ও আশপাশের এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর উপজেলা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার এলাকা এরই মধ্যে প্লাবিত হচ্ছে। যে কারণে গোমতী নদীর পানি কিছু কিছু এলাকায় বাঁধের প্রায় নিকটে চলে এসেছে। দুর্বল হয়ে পড়ছে গোমতীর বেড়িবাঁধ। তাই বিভিন্ন অংশ দিয়ে পানি চুইয়ে প্রবেশ করছিল। টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নামা ঢলের পানি ক্রমাগতই বাড়ছে। তীব্র স্রোতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গোমতীর পুরো বেড়িবাঁধেই পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় জনতা। অনেকেই বলছেন, ‘এটি কুমিল্লার জন্য ভয়ের রাত। তাই নির্ঘুম রাতে বাঁধের কোথাও ফাটল ধরেছে কি না, সেটাই পাহারা দিচ্ছে জনতা।’

দেবিদ্বারের ফতেহাবাদ ইউনিয়নের গোমতী বেড়িবাঁধের লক্ষ্মীপুরে স্থানীয় জনতাকে নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকার লোকজন নিয়ে গোমতী বেড়িবাঁধের লক্ষ্মীপুরে আছি। কোথাও ভাঙার খবর পাইনি। তবে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের নিচ দিয়ে কিছু পানি যাচ্ছে, যা বন্ধে লোকজন কাজ করছে। এতে আতঙ্কে আছে লোকজন। বৃষ্টি ও পানি বাড়ায় এখন যত শঙ্কা।’

দেবিদ্বারের বালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ফাটল রোধে রাতভর জেগে আছি। যারা নদীর পাড়ের বাসিন্দা তারা বোঝে এই রাত কত ভয়াবহ! যেকোনও সময় বাঁধের ক্ষতি হতে পারে, তাই বস্তা, কোদাল ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে প্রস্তুত আছি। কিছু অংশে সেচের স্লুইসগেট ছিল, সেগুলোও বন্ধ করেছি। পানি না কমা পর্যন্ত আমাদের ঘুম নেই।’

বুড়িচংয়ের কামারখাড়া এলাকার আব্দুল মান্নান মোবাইল ফোনে জানান, অবস্থা বেগতিক থাকায় রাতে এলাকার বাসিন্দাদের ঘুম নেই। অনেকেই ঘরবাড়ির জিনিসপত্র সরিয়েছেন। অনেকে সেগুলো সরাতে পারেননি। যারা বাঁধের পাশের বাসিন্দা, তারা খুবই আতঙ্কে আছেন। রাতে না ঘুমিয়ে অনেকেই পাহারা দিচ্ছেন।

কুমিল্লা সদরের পালপাড়া, টিক্কারচর, গোলাবাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীরা রাত জেগে পাহারা ও বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

Source link

Related posts

আলো ছড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ কর্নার

News Desk

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি বাড়ল

News Desk

তিন দিনের রিমান্ডে হেলেনা জাহাঙ্গীর

News Desk

Leave a Comment