কুমিল্লায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট। আইসিইউর জন্য করোনা ওয়ার্ডে চলছে হাহাকার। রোগীর স্বজনদের আর্তনাদ আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে পরিবেশ। অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে আঁতকে উঠছেন সাধারণ মানুষ। চলমান কঠোর বিধিনিষেধেও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ।
অতিরিক্ত রোগীর চাপ ও জনবল সঙ্কটে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
মেডিকেল কলেজ সূত্র মতে, এ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে বেড রয়েছে সর্বমোট ১৩৬টি। এর মধ্যে ২০টি আইসিইউ বেড এবং ১০টি এইচডিইউ বেড রয়েছে। তবে এসব বেড অনেক আগেই বুক হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে এ ইউনিটে ১৫১ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এদের সবাইকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। নতুনদের সিলিন্ডার অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, শয্যা সঙ্কটের কারণে অধিকাংশ রোগীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে। একাধিক নতুন মুমূর্ষু রোগীকে দেখা গেছে করোনা ইউনিটের নিচতলায় বেডের জন্য অপেক্ষা করতে। এছাড়াও রোগী নামানোর সিগন্যাল না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে অক্সিজেন লাগিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলার ১৭ উপজেলা ছাড়াও ফেনী, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসছেন রোগীরা।
কথা হয় সাইমুন নামে এক যুবকের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু দাদুকে নিয়ে এসেছেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি থেকে। হাসপাতালে সিট খালি না থাকায় করোনা ইউনিটের সামনে দীর্ঘক্ষণ অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে অক্সিজেন লাগিয়ে রেখেছেন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভর্তি করাতে।
নিজামুল হক নামে এক ব্যক্তি জানান, তার মাকে নিয়ে এসেছেন ভর্তি করাতে। করোনা ইউনিটে বেড খালি না থাকায় নিচতলায় স্ট্রেচারে রেখে অক্সিজেন দিচ্ছেন। তবুও মেলেনি ডাক্তারের দেখা। সোনিয়া জানান, তার বাবাকে এ ইউনিটে ভর্তি করান দুদিন আগে। অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবুও আইসিইউ পাওয়া যাচ্ছে না।
কুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, করোনা ইউনিটে ১৩৬টি বেডের বিপরীতে বর্তমানে ১৫১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। আমরা সাধারণ বেডে নতুন রোগীরা ভর্তি রাখছি। তিনি আরও জানান, হঠাৎ করে আইসিইউ ইনচার্জসহ হাসপাতালের ১০৩ জন ডাক্তার বদলি হওয়ায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও জনবল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় বর্তমানে সর্বোচ্চ শনাক্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মৃত্যু তো আছেই। সিটি কর্পোরেশনসহ ১৭ উপজেলায় বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। সাধারণ মানুষের অচেতনতার কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ৩০৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগে ৫ জুলাই সর্বোচ্চ ২৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। একই সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। আক্রান্তের হার ৪১ দশমিক ১ শতাংশ।