কৃষকরা ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন রসুন, বাজারে ১২০
বাংলাদেশ

কৃষকরা ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন রসুন, বাজারে ১২০

দিনাজপুরে চলতি মৌসুমে রসুনের ভালো ফলন হয়েছে। জমি থেকে রসুন তোলা, বিক্রির জন্য প্রস্তুত করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। তবে গতবারের চেয়ে দাম একটু কম পাওয়ায় অখুশি অনেকে। মৌসুমের এ সময়ে রসুন আমদানি বন্ধ থাকলে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন চাষিরা। যদিও এরই মধ্যে বাজারে রসুনের কেজি ১২০ টাকা হয়ে গেছে। তবে সেই দাম তারা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রসুনকে দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সাদা সোনা বলে থাকেন। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় মশলাজাতীয় এই পণ্যের চাহিদা ও দাম থাকে সবসময় বেশি। দেশের যেসব স্থানে রসুন আবাদ হয় তার মধ্যে দিনাজপুর অন্যতম। আবাদের দিক থেকে আবার খানসামায় বেশি হয়। খানসামার কাচিনিয়া ও দক্ষিণ আগ্রা রসুনের জন্য পরিচিত। প্রায় প্রতিটি জমিতেই আবাদ করা হয়।

দক্ষিণ আগ্রা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক জমিতে একযোগে চলছে রসুন তোলার কাজ। পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই মাঠে। সে রসুন তুলে নেওয়া হচ্ছে বাড়িতে। বাড়ি থেকে নেওয়া হয় বাজারে।

আগ্রা এলাকার কৃষকরা বলছেন, এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে দাম গতবারের চেয়ে একটু কম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। যা গতবার এই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১১০-১২০ টাকায়। সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম ওভাবে বাড়েনি। তবে কৃষকদের কাছে রসুন শেষ হলেই বাজারে দাম বেড়ে যায়। এতে লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগীরা।

দক্ষিণ আগ্রা এলাকার কৃষক গজেন কর্মকার তিন বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বীজের মণ ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। সার, কীটনাশক, হালচাষ সবকিছু মিলে আরও কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু যে দামে বিক্রি করছি তাতে লোকসান হবে।’

গতবারের চেয়ে দাম একটু কম পাওয়ায় অখুশি অনেকে

একই এলাকার কৃষক মো. সেলিম বলেন, ‘এবার উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। তবে ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দাম পাচ্ছি না। এক বিঘায় আবাদে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। যদি এক বিঘায় ৫০ মণ হয় তাহলে বর্তমান বাজার অনুযায়ী মণ পড়ে তিন হাজার ২০০ টাকা। হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা হয়। তাহলে আমাদের লাভ কোথায়? তবে এই সময়ে আমদানি বন্ধ থাকলে ভালো দাম পাওয়া যায়।’

ভাবকী এলাকার কৃষক কেবল কর্মকার বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। এবার দাম কম। আমাদের বিক্রি শেষ হলে তখন দেখা যাবে বাজারে দাম বেড়ে গেছে। আসলে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য আমরা দাম পাই না।’

দক্ষিণ আগ্রা এলাকার কৃষক মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে কিন্তু খুচরায় ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু আমরা বিক্রি করতে গেলে দাম পাই না। মণ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২০০ থেকে চার হাজার। তিন গ্রেডে বাছাই হয়। বড়, মাঝারি ও ছোট। ছোট রসুনের দাম কম। আসলে এই দামে রসুন বিক্রি করে লাভ হয় না।’

রসুন তুলে নেওয়া হচ্ছে বাড়িতে

কাচিনিয়া এলাকার কৃষক হবিবর রহমান বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে মণ ছিল ছয়-সাত হাজার টাকা। কিন্তু এবার দাম কম। কৃষকের কোনও লাভ হচ্ছে না। যে কৃষক সে কৃষকই থেকে যায়। ব্যবসায়ীরা লাভবান হন।’ 

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জাফর ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি বছর জেলায় তিন হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৪১ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন উৎপাদিত হবে। তবে এখন দাম একটু কম। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দাম বাড়বে। কারণ সামনে কোরবানির ঈদ। কৃষকরা এই সময়টাতে রসুন শুকিয়ে রেখে দিতে পারেন। বাজারে যখন দাম বাড়বে তখন বিক্রি করবেন। সংরক্ষিত এসব রসুন পরবর্তী মৌসুমে বীজ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন তারা।’ 

Source link

Related posts

আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে ১৫ গ্রাম প্লাবিত

News Desk

উল্লাপাড়ায় পঞ্চম শ্রেণীর শিশু ধর্ষণ, ২ আসামী গ্রেফতার

News Desk

পচবে না পেঁয়াজ-সবজি, কমবে দাম

News Desk

Leave a Comment