খাগড়াছড়িতে ডেঙ্গুর চেয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত দ্বিগুণ
বাংলাদেশ

খাগড়াছড়িতে ডেঙ্গুর চেয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত দ্বিগুণ

খাগড়াছড়িতে ডেঙ্গুর চেয়ে দ্রুত বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা। গত ১ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৬ জন। এর মধ্যে ম্যালেরিয়ায় ১২১ এবং ৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই হিসাবে জেলায় ডেঙ্গুর চেয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী প্রায় দ্বিগুণ।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানায়, জুন মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। চলতি মাসের ১১ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন ৫০ জন আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৪৪ জন। তবে চলতি বছর ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ায় এখনও কেউ মারা যাননি।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জুন মাসের শেষ সময় থেকে মাটিরাঙ্গা, গুইমারা উপজেলা ডেঙ্গুর হট স্পটে পরিণত হয়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগ মাটিরাঙ্গা পৌরসভা এবং গুইমারার জালিয়াপাড়ার। ইতিমধ্যে মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকাকে ডেঙ্গুর হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি আক্রান্তরা সদর হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।

মাটিরাঙ্গার নতুন পাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছোট ভাই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ ধরে সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ভাইয়ের কষ্টের শেষ নেই। দায়িত্বশীলরা এতদিন বলেছেন, পার্বত্য এলাকা থেকে ম্যালেরিয়া বিদায় নিয়েছে। তাহলে এখন কোথা থেকে এলো? এখন অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

গুইমারা উপজেলার বড়পিলাক এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদের আগে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঈদের তিন দিন পর বাড়ি ফিরে স্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। এখনও শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি।’

আক্রান্তদের স্বজনরা বলছেন, দিন-রাত সবসময় মশার উপদ্রুব দেখা যাচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করা এবং মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

তবে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র শামছুল হক বলেছেন, ‘মশা নিধনে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছু স্থানে কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’

বর্ষা মৌসুমে মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানালেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মিটন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সবার বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেইসঙ্গে রাতে মশারি লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। সবাইকে এ নিয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।’

স্থানীয়দের অসচেতনতার কারণে মাটিরাঙ্গা এবং গুইমারায় বেড়েছে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা—এমনটি জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা। তিনি বলেন, ‘যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার না রাখা এবং জমানো পানি অপসারণ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ে সচেতন হলে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে।’

ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে উল্লেখ করে জেলা সিভিল ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, ‘আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি অন্যদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে মশারি ব্যবহারের পাশাপাশি নিজেদের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলছি আমরা।’

 

Source link

Related posts

করোনা রোধে নতুন কৌশল পোশাক কারখানায়

News Desk

অর্থনৈতিক বিপর্যয় প্রতিকারে অদম্য বাংলা ৮৮ এর মতবিনিময় সভা

News Desk

বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে কারের সঙ্গে সংঘর্ষ ট্রাকের

News Desk

Leave a Comment