খুলনার আলোচিত মডার্ন সি ফুডের কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার সাহা হত্যার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিকের ছেলে শিল্পপতি মেহেদী হাসান স্টারলিংসহ পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৪ এপ্রিল) খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন। মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন চার জন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলো—মেহেদী হাসান স্টারলিং, আরিফুল হক সজল, নাহিদ রেজা রানা ওরফে রানা ওরফে লেজার রানা, ডালিম শিকদার ওরফে আমির শিকদার ডালিম ও সজল মোল্লা।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন—কাউসার আলী, জাহিদ হাসান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন, হাসিবুজ্জামান রনি ওরফে রনি হাওলাদার ও সজল গাজী।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, উজ্জ্বল কুমার মডার্ন সি ফুডের ফিন্যান্স শাখায় কর্মরত ছিলেন। চাকরির সুবাদে পরিচালক মেহেদী হাসান স্টারলিংয়ের বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। মেহেদীর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তাদের কাছে সরবরাহ করতেন উজ্জ্বল। এক পর্যায়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার চাকরি চলে যায়।
এরপরও মেহেদী হাসান বিভিন্ন বিষয়ে তাকে সন্দেহ করতেন। এক পর্যায়ে উজ্জ্বলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ জুন সকাল পৌনে ১০টায় পূর্ব পরিচিত সন্ত্রাসী দিয়ে মেয়ের স্কুলে সামনে তার ওপর হামলা চালানো হয়। আহতাবস্থায় উজ্জ্বলকে প্রথমে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় উজ্জ্বলের ছোট ভাই সুমন কুমার সাহা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মেহেদী হাসানসহ সব আসামিকে গ্রেফতার করেন তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার এসআই সোহেল রানা। এর মধ্যে আসামি মামুনকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর সকল আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মামলা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান স্টারলিং ও তার বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনের নাম বাদ রেখে আট জনের নামে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা।
২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শেখ শাহাজাহানের ওপর ন্যস্ত করা হয়। তদন্ত শেষে একই বছরের ১২ অক্টোবর প্রধান আসামি মেহেদী হাসান স্টারলিং ও তার বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগ দাখিল করা হয়। ২
২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর খুলনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই সদরদফতরের সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামের ওপর ন্যস্ত হয়। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি মামলার কেস স্টোরি স্টাডি করেন। সেখানে তিনি দেখেন, মডার্ন সি ফুডের পরিচালক মেহেদী হাসান স্টারলিংয়ের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা পরিবারকে বলার কারণে উজ্জ্বল কুমার সাহাকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয়।
ঘটনার দিন সকালে উজ্জল কুমার মেয়েকে নিয়ে জোহরা খাতুন বিদ্যানিকেতনে যান। রংধনু ক্লিনিকের সামনে মোটর সাইকেল রাখা স্থানে পৌঁছানো মাত্র কিছু বুঝে ওঠার আগে সস্ত্রাসীরা তার ওপর আক্রমণ চালায়। হামলাকারীরা এ সময় ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প ও ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মূল পরিকল্পনাকরী মেহেদী হাসান স্টারলিংকে কীভাবে মামলা থেকে পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তারা বাদ দিলেন তা বোধগম্য নয় বলে সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন আমিনুল ইসলাম।