প্রায় দেড় মাস আগে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। পরে অস্থায়ী ঘর তুলে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার রান্নাঘরের পাশে রেখে পাঠদান শুরু করা হয়। এখন খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে কোনও রকমে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭০ সালে উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া চরের আহাম্মেদ মাঝিরকান্দি এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এরপর থেকে টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা মেঝের ঘরে চলছিল পাঠদানের কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের একটি ভবনে ছিল পাঁচটি কক্ষ। পাঁচ কক্ষের ভবনটি গত ৫ অক্টোবর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাইনপাড়ার চরে পদ্মা সেতুর অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে মাদ্রাসার রান্নাঘরের পাশে ৫২ নম্বর পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে। দোচালা টিনের ঘরের সামনে তিন সারিতে চলছিল শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ৩৬ শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন দুজন শিক্ষক। একসঙ্গে তিন শ্রেণির পাঠদান চলায় কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছিল না। গাদাগাদি করে বলেছিল শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এই বিদ্যালয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ভবনটি নদীতে বিলীন হওয়ার পর পদ্মা সেতুর অধিগ্রহণকৃত জমিতে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। ভবন না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষ ছাড়া বাইরে বসে ক্লাস করতে হয়। বৃষ্টি কিংবা রোদ হলে স্থানীয় মাদ্রাসার রান্নাঘরের ঝাপের নিচে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নেন। এতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাদুল রায়হানা ও চতুর্থ শ্রেণির সামিয়া আক্তার জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই নদী পার হয়ে খোলা আকাশের নিচে এখন ক্লাস করতে হচ্ছে। রোদ ও বৃষ্টি হলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই আমাদের বিদ্যালয়ের ভবন দরকার।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মজিবর ও ফাহিমা বেগম জানান, ভবনটি নদীতে বিলীন হওয়ার পর থেকে অভিভাবকরা চিন্তায় আছেন। আহাম্মেদ মাঝিরকান্দি এলাকায় কোনও বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা নদী পার হয়ে এই বিদ্যালয়ে আসছে। এটির ভবনের ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যালয়ের দফতরি রিপন শেখ বলেন, ‘ভবন না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজ বন্ধ হয়ে আছে।’
সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে কষ্ট করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ের ভবনটি যেন দ্রুত করা হয়, এই দাবি জানাচ্ছি।’
প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়ের ভবন ধসে গেছে। বাধ্য হয়ে পদ্মা সেতুর অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করতে হচ্ছে। আমাদের বিদ্যালয়ে ১২৩ জন শিক্ষার্থী। ভবন না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাজিরা উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিহাজুর রহমান বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে একটি টিনশেড ভবনে ক্লাস করানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এজন্য বরাদ্দ চেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয়ের ভবন তৈরি করা হবে।’