গরমে চ্যালেঞ্জের মুখে খামারি ও ব্যাপারীরা
বাংলাদেশ

গরমে চ্যালেঞ্জের মুখে খামারি ও ব্যাপারীরা

বরিশালের স্থায়ী ও অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটগুলো এখনও জমে ওঠেনি। অতিরিক্ত গরমের কারণে হাটে গরু উঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও ব্যাপারীরা। তাপমাত্রাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে খামারেই গরু বিক্রি প্রায় শেষ করেছেন অধিকাংশ খামারি। বেশিরভাগ গৃহস্থ বাড়িতে বসেই বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে হাটের চেয়ে বাড়ি ও খামার থেকে গরু কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যের কথা জানিয়েছেন ক্রেতারা।

গৃহস্থ ও খামারিরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে খামারের শেডে প্রতিদিন চার-পাঁচবার প্রতিটি গরুকে গোসল থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত বাতাসের মধ্যে রেখে সুস্থতা নিশ্চিত করে বিক্রি করতে হচ্ছে। একই অবস্থা গৃহস্থদেরও। হাটে গরু তুললে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই হাটে তুলছেন না। খামার কিংবা বাড়িতে কোনোটি অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণী চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ দেওয়া হয়। কোনও একটি গরু অসুস্থ হয়ে মৃত্যু মানেই বড় ধরনের ক্ষতি। এই ভয়ে হাটে না তুলে বাড়ি ও খামারেই বিক্রি করছেন তারা।

এমনটাই বলেছেন বরিশাল কেমিস্ট অ্যাগ্রো বায়োটেকের সমন্বয়ক পারভেজ আলম। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে এবার কোনও পশু আমরা হাটে তুলিনি। সবগুলো খামার থেকেই বিক্রি হয়েছে।’

কেমিস্ট অ্যাগ্রো বায়োটেকের পরিচালক অলি উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে গরুকে সুস্থ রাখতে শেডে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন এবং সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা আছে। একইসঙ্গে স্যালাইন পানি ও পর্যাপ্ত সাধারণ পানি খাওয়ানো হয়। কোনোভাবে প্রাণী অসুস্থ হলে খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয়। এতে ওজন কমে যায়। যা ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। একটি গরু লালনপালনে অনেক টাকা খরচ হয়। বিশেষ করে খামারের বাইরের খাবার খেলে অনেক গরুর পেটে সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য খামারে রাখাই নিরাপদ।’

কেমিস্ট অ্যাগ্রো বায়োটেকের ইনচার্জ মো. সুজন বলেন, ‘চলতি মাসের শুরু থেকে আমাদের খামারের গরু বিক্রি শুরু হয়। ৫০ হাজার থেকে সাত লাখ টাকার গরু রয়েছে খামারে। দুই শতাধিক গরুর বেশিরভাগ বিক্রি হয়ে গেছে। কোরবানির দিন সকালে ক্রেতার বাড়ির সামনে খামারের খরচে পাঠানো হবে। এমনকি কেনার পর যে কয়েকদিন পালন করা হয়েছে, সেই টাকা ক্রেতাকে দিতে হবে না। হাটে ঠেলাঠেলি করে পশু কিনতে এখন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না ক্রেতারা। এজন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশে এসে পছন্দের গরুটি ওজন করে টাকা দিয়ে চলে যান। এখানে দরদামের প্রয়োজন হয় না। এক দামে ওজনে বিক্রি হওয়ায় ক্রেতাও খুশি হন।’

এবার তাপমাত্রা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার কথা জানিয়েছেন হাটের ব্যাপারী ও গৃহস্থরা। নগরীর বাঘিয়া হাটের ব্যাপারী মাহাবুব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানিতে ৩০-৪০টি গরু বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে হাটে বিক্রি করি। এবার ২০টি তুলেছি। সেক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে একটি মারা গেলে সব শেষ হয়ে যায়। এজন্য হাটে ওঠানো বড় চ্যালেঞ্জ। এরপরও দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে হাটে তুলতে হয়।’ 

তাপমাত্রাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে খামারেই গরু বিক্রি প্রায় শেষ করেছেন অধিকাংশ খামারি

বানারীপাড়া উপজেলার চাখারের বাসিন্দা সুমন হাওলাদার বলেন, ‘প্রতি কোরবানিতে দুই-তিনটি গরু বিক্রি করি। আগে হাটে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। এ বছর বাড়ি থেকেই বিক্রি করে দিয়েছি। তীব্র গরমের কারণে হাটে তুলছি না। বাড়ি বাড়ি এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। দামের তেমন একটা পার্থক্য নেই। হাটে নিলে আরও বেশি খরচ হয়। হাসিল দিতে হয়। দুর্ভোগে পড়তে হয়। এসব ঝামেলা বাড়িতে নেই।’

বাঘিয়া হাট পরিচালনাকারী সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার হাটগুলো এখনও জমে ওঠেনি। হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা আছে। একইসঙ্গে ক্রেতা এসে যাতে ছায়ায় বসতে পারেন, তারও ব্যবস্থা আছে। আছে প্রাণী চিকিৎসকের টিমও। ফলে গৃহস্থ ও ব্যাপারীদের ক্ষতি হওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই।’

এবার নগরীর হাটগুলো শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তেমন একটা জমে ওঠেনি। শনিবার এবং রবিবার জমতে পারে বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা। তবে ইতোমধ্যে জমে উঠেছে উপজেলার হাটগুলো। সেখানে গরু কিনতে নগরী থেকে ছুটছেন ক্রেতারা। অনেকে গরু কিনে আনছেন।

খামারের শেডে প্রতিদিন চার-পাঁচবার প্রতিটি গরুকে গোসল করাতে হয়

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নূরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে কোরবানির প্রাণীগুলো যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে, সেজন্য খামারিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একাধিক মেডিক্যাল টিম মাঠে রয়েছে। ব্যাপারী ও খামারিদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। প্রাণীকে সুস্থ রাখতে স্যালাইনযুক্ত পানি পান করানোর কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পর্যাপ্ত সাধারণ পানির পাশাপাশি খাবারও দিতে হবে। এছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদের জানানোর জন্য খামারিদের অনুরোধ করা হয়েছে। কোনোভাবেই ব্যাপারী ও খামারিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।’

এবার জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ১১ লাখ দুই হাজার ৯৪৭টির উল্লেখ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কোরবানির উপযোগী পশু রয়েছে ১১ লাখ চার হাজার ৫৫৭টি। এর মধ্যে গরু ৯১ হাজার ৮৪৮টি, ছাগল ২২ হাজার ৫৯০টি, ভেড়া ৭৪টি এবং অন্যান্য ৪৫টি। পশুর কোনও সংকট হবে না।’

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ছিল ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি আরও দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ বছর এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Source link

Related posts

বিমানের ২০ থেকে ২৪ মের সব ফ্লাইট বাতিল

News Desk

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

News Desk

দুধের সরবরাহ বাড়াতে ৩০০ কালেকশন সেন্টার

News Desk

Leave a Comment