রাজধানীর নিউমার্কেটের অদূরে বিজিবি তিন নম্বর গেটের সামনের রাস্তায় বুধবার রাত ৮টার দিকে টিসিবির পণ্য নিয়ে একটি ট্রাককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আধো আলো-অন্ধকারে এ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সুলভমূল্যে মসুরের ডাল, তেল ও চিনি কিনতে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষকেও অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ট্রাকের ওপর হঠাৎ এক নারীকে রাগতস্বরে উচ্চকণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘আগে ট্যাকা দিলেন ক্যালা, আগে মাল বুইজ্যা লইবেন, হেরবাদে ট্যাকা দিবেন’। (আগে টাকা দিলেন কেন, আগে পণ্য বুঝে নেবেন, তারপর টাকা দেবেন)।
টিসিবির ট্রাকে পণ্য মাপামাপি, প্যাকেটে ভরে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়া ও টাকা-পয়সা নেয়ার কাজ যারা করছিলেন তারা দুজনই নারী। লাইন থেকে দ্রুত পণ্য দেয়ার তাগাদা দিতেই ওই নারী ফের বলে ওঠেন, ‘যাগো বেশি জলদি দরকার, তারা চইল্যা যাইবার পারেন। তাড়াহুড়া কইরা কি আমি লস দিমুনি। সাধারণত ঢাকা শহরে টিসিবির ট্রাকে পুরুষদেরই পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। ট্রাকের ওপর যে নারী নরম-গরম সুরে পণ্য বিক্রি করছিলেন তার সম্পর্কে জানতে এগিয়ে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। গরমে দরদর ঘামছিলেন তিনি। ভদ্রমহিলার নাম আসমা আক্তার রুনা। লালবাগের দেবিদাস ঘাটের বাসিন্দা রুনা একাধারে রাজনীতি ও ব্যবসা করেন।
তিনি নিজেকে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক পরিচয় দিয়ে জানান, দল ক্ষমতায় আসার পর তাদের দেখার কেউ নেই। তাই ১৩ বছর ধরে তিনি টিসিবির পণ্য বিক্রি করেন। রুনা জানান, টিসিবির পণ্য বিক্রি করে যা লাভ করেন তা নিজের কর্মীবাহিনী, এলাকার গরিব-দুখী মানুষের পেছনে খরচ করেন। কর্মীদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান, খাওয়া-দাওয়া করেন। এতেই তার ভালো লাগে। সন্তানরা বাধা দিলেও তিনি এ ব্যবসা করেই যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারাদেশে গত ৬ জুন থেকে সাশ্রয়ীমূল্যে তিনটি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। পণ্য তিনটি হলো- তেল, চিনি ও মসুরের ডাল। প্রতি কেজি চিনি ও মসুর ডাল ৫৫ টাকা এবং সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা এককভাবে দুই কেজি চিনি ও মসুর ডাল এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার তেল নিতে পারছেন।
টিসিবির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ৪০০ জন ডিলারের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে এ বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৮০টি ও চট্টগ্রাম সিটিতে ২০টি ট্রাকে এ পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, প্রতিটি ট্রাকে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ কেজি চিনি, ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি ডাল ও ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। দেশব্যাপী ৪০০ ট্রাকে আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।