‘গত কোরবানির ঈদে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নরসিংহপুর ঘাটে কয়েক ঘণ্টা ফেরির অপেক্ষায় ছিলাম। প্রচন্ড রোদে অসুস্থ হয়ে আমার একটি গরু মারা যায়। এতে দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়। আমার মতো আরও কয়েকজনের গরু মারা গিয়েছিল। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার দ্রুত গরু নিয়ে হাটে যেতে পারছি। এখন আর ফেরিঘাটে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। এতে কারও গরু মরে লোকসান গুনতে হবে না।’
শুক্রবার (১ জুলাই) সকালে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজার সামনে কথাগুলো বলছিলেন যশোরের গরু ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন হাওলাদার। ঈদুল আজহা উপলক্ষে দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে তার মতো অনেক ব্যবসায়ী রাজধানী ও চট্টগ্রামের পশুর হাটে গরু নিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার দুর্ভোগ কমেছে। দ্রুত পদ্মা নদী পার হওয়া যাচ্ছে। না ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় আর বসে থাকতে হবে না। এতে যানবাহন সংশ্লিষ্ট কর্মীদের খরচ ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে অসুস্থ হয়ে পশু মৃত্যুর শঙ্কাও থাকছে না। এসব কারণে এবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে পশুর সরবরাহ বাড়বে। বেচাকেনা শেষে দ্রুত ফিরেও যেতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।
ভালো দামের আশায় এক সময় শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পশু নিয়ে যেতেন। পদ্মা পার হতে এসব ট্রাকের জন্য এতদিন ফেরিই ছিল ভরসা। বিড়ম্বনার সঙ্গে যুক্ত হতো বাড়তি খরচ। ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় থাকতেন, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডায় পশু আবার মরে না যায়। অনেক সময় ফেরিঘাটে অসুস্থ গরু জবাই করে কম দামে মাংস বিক্রির নজিরও রয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে, গাড়িবোঝাই করে গরু নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কথা বলে জানা গেছে, তারা খুব খুশি। পদ্মা সেতু তাদের সব দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে। সেতু চালু হওয়ার আগে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গরু নিয়ে বসে থাকতে হতো। এতে তাদের খরচ বেড়ে যেত বহুগুণ। সেতু চালু হওয়ায় তাদের খরচ ও সময় কম লাগছে।
গাবতলী পশুর হাটে গরু নিয়ে যাওয়া সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ কমছে। কিন্তু এ বছর পশুর দাম বেশি। কারণ পশুর খাবার ও ওষুধের দাম বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খরচ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে একটি ট্রাকে ২০টি গরু আনতে খরচ হতো ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন হয় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। কোরবানির সময় এ খরচ আরও বাড়বে। তবে পদ্মা সেতু হওয়ায় হাটে গরু নিয়ে যাওয়ার দুর্ভোগ কমেছে।’
শরীয়তপুরের গরু খামারি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ফেরির ঝামেলায় আগে বড় গরুগুলো স্থানীয় হাটে বিক্রি করতাম। এখন সেতু চালু হয়ে গেছে। এবার আমার খামারের বড় গরুগুলো রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে বিক্রি করবো। আশা করি এ বছর ভালো দাম পাবো। গত বছরে করোনার কারণে হাটে মানুষ কম ছিল। তারপর ফেরির ঝামেলায় ঢাকায় নিতে পারেনি। এ বছর আর সেই ঝামেলা থাকছে না।’
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল ইনচার্জ মো. মনির হোসেন জানান, নির্বিঘ্নে গাড়ি পার হচ্ছে। সেতু এলাকা পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনও যানজট নেই। তিন দিন ধরে পশুবাহী গাড়ি বেশি পার হচ্ছে। এসব গাড়ি দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।