গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানার সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কালিয়াকৈরের চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রেখেছেন। এতে ওই সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, ভবানীপুর এলাকায় বেক্সিমকো গ্রুপের অপর প্রতিষ্ঠান বিগবস কারখানায় আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
অপরদিকে, গাজীপুর মহানগরীর তিন সড়ক এলাকায় আড়ং ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের কর্মীরা শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ১৮ হাজার টাকা এবং ক্যাজুয়াল কর্মীদের চাকরি স্থায়ী করাসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ ছাড়া রাজেন্দ্রপুর (বাংলাবাজার) এলাকায় পারটেক্স গ্রুপের আরসি কোলা বেভারেজ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এসব কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘গাজীপুরের কাশিমপুর থানার সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে একাধিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ওই কারখানার মালিক শিল্পপতি সালমান এফ রহমান। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানাগুলোতে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। যাদের বেতনের পরিমাণ প্রতি মাসে ৮২ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়ে আসছেন। মঙ্গলবার কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করলেও বেশির ভাগ শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে তা যায়নি। ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শ্রমিকরা আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন। বুধবার সকাল থেকে একই দাবিতে শ্রমিকরা কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই সড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ বলছে তারা বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু শ্রমিকরা তাদের সময়ই দিচ্ছেন না। শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। তবে আশা করা যাচ্ছে, আজকের মধ্যেই সবার বেতন পরিশোধ করবে কর্তৃপক্ষ।’
আড়ং ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের কর্মীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– ক্যাজুয়াল কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণ, কর্মীদের সর্বনিম্ন বেতন ১৮ হাজার টাকা, ক্যাজুয়াল কর্মীদের মাতৃত্ব ভাতা ও ছুটি প্রদান, প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদত্যাগ, বাৎসরিক ছুটি প্রদান, পরিবহন হেলপারদের কিলোমিটার প্রতি টাকা বৃদ্ধি, বিনা নোটিশে ক্যাজুয়াল কর্মীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত না করা।
এদিকে, কাশিমপুর থানার ভবানীপুর এলাকায় বেক্সিমকো গ্রুপের অপর প্রতিষ্ঠান বিগবস কারখানায় অন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেলা ১১টার দিকে আগুন দেন।
স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসার পথে অন্দোলনকারী শ্রমিকরা তাদের গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এ জন্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ওই কারখানায় ঢুকতে পারেনি। বেলা ১১টার দিকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন বলেন, ‘বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানায় আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যাচ্ছিল। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ভাংচুর করলে কর্মীরা চলে আসে। পরে আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছি। তারা সহযোগিতা করলে আমরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করবো।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে বকেয়া বেতনের দাবিতে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ওই কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। পরে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। এখন পর্যন্ত আগুন জ্বলছে।
আড়ং ডেইরি কারখানার আন্দোলকারী শ্রমিকরা বলেন, ‘আমাদের ১০ দফা দাবি মানতে হবে। মহাসড়ক অবরোধ করিনি, কারখানার সামনেই অবস্থান করছি। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কারখানায় ৬০০ থেকে ৭০০ শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেক কর্মী ক্যাজুয়াল। বর্তমানে শ্রমিকদের বেতন ৯ হাজার ৮০০ টাকা। এজন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এসেছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। সকাল থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলেও এখন পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমাদের দাবি না মানলে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।’