গোমতী নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়েছে বুধবার। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী পানি বিপদসীমার ১২০ সেন্টিমিটার (সে.মি.) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনও বাড়ছে পানি। জনমনে তৈরি হচ্ছে শঙ্কা। এর মাঝেই বিভিন্ন এলাকার বাঁধ চুইয়ে পানি আসারও খবর পাওয়া গেছে। টানা বৃষ্টি ও পাড় চুইয়ে আসা পানিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে বাঁধ। যেকোনও সময় ভেঙে যেতে পারে। কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পাউবো, উপজেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করছেন। বাঁধের বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অংশ দিয়ে বুধবার থেকে লোকালয়ে কিছু পানি ঢুকছে। এরমাঝে পাড় ঘেঁষা পালপাড়া, টিক্কারচর, চাঁনপুর, পালপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, শিমাইলখাড়া, কামারখাড়া এলাকার বাঁধের কোথাও কোথাও দেবে যেতেও দেখা গেছে। সেখানে মেরামতের কাজ করছে সাধারণ মানুষ।
এসব এলাকায় স্থানীয় লোকজনকে বাঁধে ও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে মাইকিং করা হয়েছে। অনেকেই যাচ্ছেন। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ও গবাদি পশুপাখি। আবার অনেকের ঘরবাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে গেছে ঢলের পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, গত ২০-৩০ বছরেও এমন পানি হয়নি গোমতীতে। একেতো বৃষ্টি তার মধ্যে ভারত থেকে আসা উজানের পানি। গত কয়েক বছরে এভাবে কখনোই ভারত থেকে পানির ঢল নামেনি। ভারতেও অতিবৃষ্টির বন্যায় ৫ জন মারা গেছেন বলে শুনলাম। এভাবে চলতে থাকলে আজ রাত বা কাল যেকোনও সময় বেড়ি বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, বিপদসীমার এত ওপরে থাকা পানিতে এমন বাঁধ থাকে না। ভেঙে যায়। আমরা বলবো সৃষ্টিকর্তার দয়ায় এটা আছে। এর মাঝেই আজ (বৃহস্পতিবার) সারাদিন বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ চুইয়ে পানি বের হতে দেখা গেছে। পুরো বাঁধেই লিকেজ (ছিদ্র) দেখা গেছে। কিছু লিকেজ বন্ধ করলেও পাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে পানির চাপ। মনে হয় না বাঁধ খুব শক্ত আছে। তাই ভেঙে পড়ার ভয় দেখা দিয়েছে।
যদি বাঁধ ভেঙে যায় পরিস্থিতি কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভয় এখন বাঁধ নিয়ে। কারণ গোমতী আর শহরের উচ্চতার ব্যবধান ১৫-২০ ফুট। যদি পানি ঢুকে পড়ে তাহলে শহরের ভবনগুলোর দুইতলা পর্যন্ত প্লাবিত হতে পারে। নিচু ভবনগুলোর ক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ কিছু। তাছাড়া এটার জন্য কিন্তু সময় পাওয়া যাবে না। কারণ প্রতিনিয়ত পানির চাপ বাড়ছে। যদি পানির চাপ এভাবেই বাড়তে থাকে তাহলে খুবই কম সময়ের মধ্যে শহর প্লাবিত হবে।
তিনি স্থানীয় জনতাকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার অনুরোধ করে বলেন, আমরা গতকাল (বুধবার) থেকে বলে আসছি নিরাপদ স্থানে জনসাধারণ যেন চলে যায়। অপেক্ষাকৃত উঁচু ও নিরাপদ স্থানে থাকুন। ঝুঁকি কমলে আমরাই অনুরোধ জানাবো বাড়ি ফেরার জন্য।
.
ছবি: প্রতিবেদক