কুড়িগ্রামের রৌমারী-চিলমারী নৌপথে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ‘জিম্মি করে’ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঘাট ইজারাদারের বিরুদ্ধে যাত্রীদের হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৫ জুন) বিকালে রৌমারী নৌঘাটে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ওই নৌপথে ফেরি চলাচল করলেও নৌঘাটের ইজারাদারের সঙ্গে যোগসাজশে ফেরিতেও যাত্রী পারাপারে হয়রানি করা হচ্ছে। যানবাহন কম থাকার অজুহাতে যাত্রা বিলম্বের কারণ দেখিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।
যাত্রীরা বলছেন, এই নৌপথের দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। নিয়মিত নৌকা ভাড়া ১০০ টাকা হলেও ঈদে ঘরমুখো মানুষদের ধর্মীয় অনুভূতিকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীর নৌকা ভাড়া ২০০ টাকা, মোটরসাইকেল ভাড়া ২০০ টাকা, মোটরসাইকেল ওঠানো ১০০ টাকা এবং নামানো বাবদ আরও ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। মোটরসাইকেলসহ একজন যাত্রী পারাপার করতে গুনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা। অথচ ফেরি ভাড়া মাত্র ৫০ টাকা। সিন্ডিকেট করে তাতেও যাত্রী হয়রানি চলছে।
গাজীপুরের একটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন মোসলেমা খাতুন মিতু। শনিবার রৌমারী নৌপথে তিনি চিলমারী ফিরছিলেন। ফেরির টিকিট করলেও তা ফেরত নেওয়া হয়। প্রতিবাদ করলে তাকে পেটাতে তেড়ে যান ইজারাদারের লোকজন। এমন অভিযোগ করে মিতু বলেন, ‘আমরা আসলে অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছি। নৌকার ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। ফেরির টিকিট নেই। কিন্তু ফেরির লোকজন ঘাট ইজারাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে টিকিট ফেরত নেয়। প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের লোকজন আমাদের গায়ে হাত তোলারও চেষ্টা করছে। ঘাটে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছি।’
একই অভিযোগ করেন এনজিও কর্মী নিশিত কুমার বর্মণ। তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলসহ নৌকায় ভাড়া দিতে হচ্ছে ৬০০ টাকা। ফেরিতে ভাড়া কম। কিন্তু সেখানেও বিড়ম্বনার শেষ নেই।’
ঢাকা থেকে আসা আরেক যাত্রী নয়ন মিয়া বলেন, ‘রৌমারী ঘাটে এত অব্যবস্থাপনা যে তা বলার মতো না। মোটরসাইকেলসহ নৌকায় যেতে একজন যাত্রীর কাছে ৬০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে ঘাটে আসতে ২০০ টাকার তেলও লাগেনি। কিন্তু এরা লিঁয়াজো করে যাত্রী হয়রানি করছে। প্রতিবাদ করায় আমাদের মারতেও আসছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রৌমারী নৌঘাটটি বর্তমানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন। এই ঘাট থেকে চিলমারী নৌপথে দুটি ফেরির পাশাপাশি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে। যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জিম্মি করে ইজারাদারের লোকজন হয়রানি করছেন।
রৌমারী ঘাট ইজারাদার নাসির উদ্দিন যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাওয়ার ঘটনা স্বীকার করলেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন যাত্রী ফেরি ছাড়া না ছাড়া নিয়ে ফেরির লোকজনের ওপর চড়াও হয়। কেউ কেউ ঢিল ছোড়ে, মোবাইল দিয়ে ভিডিও করে। ফেরির লোকজনের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কয়েকজন ওদের ওপর চড়াও হইছিলাম। কিন্তু সিরিয়ালের নৌকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ সত্যি নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিকাল সাড়ে ৪টায় সিরিয়ালের নৌকা শেষ হয়। এরপর যাত্রী আসলে তাদের বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিজার্ভ করে যাইতে হয়। সেটি না নিলে তো পোশাবে না।’
এদিকে, বাড়তি ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির খবরে শনিবার সন্ধ্যার আগে পুলিশ নিয়ে রৌমারী ঘাটে যান সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তবে সে সময় সিরিয়ালের নৌকা শেষ হওয়ায় তিনি যাত্রীদের অভিযোগ যাচাই করতে পারেননি।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আছিফ উদ্দীন মিয়া বলেন, ‘আমরা সিরিয়ালের নৌকা পাইনি। ফলে যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে চিলমারী ঘাট থেকে রৌমারী ঘাটে পৌঁছানো একটি নৌকার যাত্রীদের কাছে মোটরসাইকেলের ভাড়া বেশি নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। আমাদের উপস্থিতি জানতে পেরে অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত দেওয়া হয়।’
‘স্লিপে হাতে লিখে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ইজারাদারকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ঈদের আগে ঘাটে নজরদারি বাড়ানো প্রশ্নে জানান এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রবিবার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘাটে উপস্থিত থেকে নজরদারি করবেন।