ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কোনও ধরনের কাজ হয় না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ফার্মেসি মালিকরা।
ফার্মেসি মালিকদের অভিযোগ, লাইসেন্স নবায়ন, নতুন লাইসেন্স করা ও ফার্মেসি খোলার অনুমতিসহ সব কিছুতেই মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মনিরুল হক। ঘুষের টাকা চাওয়া নিয়ে রবিবার (২৯ মে) দুপুরে স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন মনিরুল। বিকালে ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মনিরুলের প্রত্যাহার দাবি করেন।
তবে মনিরুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কথা বলে ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন করে ড্রাগ লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে ঘুষ নেন মনিরুল হক। তার ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ফার্মেসির জন্য ড্রাগ লাইসেন্স করতে পৌরসভার ভেতরে ব্যাংক ড্রাফসহ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৭৫ টাকা। পৌরসভার বাইরে এক হাজার ৭২৫ টাকা। একইভাবে দুই বছরের জন্য ড্রাগ লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে পৌরসভার ভেতরে এক হাজার ৮৭৫ টাকা এবং পৌরসভার বাইরে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২৫ টাকা। কিন্তু লাইসেন্স নবায়ন করতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৬০-৭০ হাজার টাকা নেন মনিরুল হক। একইভাবে লাইসেন্স করতে ৭০-৮০ হাজার টাকা নেন।
শহরের আজাদ ফার্মেসির মালিক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ফার্মেসির ১৯৮৬ সালের লাইসেন্স ছিল। গত বছর লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলাম। তখন ঔষধ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন আমার লাইসেন্সের কাগজপত্র ঠিক নেই। অথচ ৩২ বছর ধরে এই লাইসেন্সে ব্যবসা করছি। কিন্তু এখন তারা কাগজপত্রে সমস্যার কথা বলছেন। এজন্য লাইসেন্স দিচ্ছেন না। আজ-কাল বলে ঘুরাচ্ছেন। এরপর বলা হয়, ৫০ হাজার টাকা লাগবে।’
উষা ড্রাগ হাউসের মালিক সজল সরকার বলেন, ‘গত ১৫ বছরে কোনও ঝামেলা হয়নি। কিন্তু মনিরুল আসার পর থেকে ফার্মেসির মালিকরা ঔষধ অধিদফতরের কার্যালয়ে যেতে ভয় পান। কাগজপত্রে সমস্যা আছে বলে নানাভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেন মনিরুল। আমার একটা লাইসেন্স তিনি দেড় বছর পরে দিয়েছেন। এজন্য কয়েক ধাপে ঘুষ নিয়েছেন। আমরা মনিরুলের প্রত্যাহার দাবি করছি।’
নবীনগর থেকে আসা গোপাল সাহা নামে আরেক ফার্মেসি ব্যবসায়ী বলেন, ‘লাইসেন্স নবায়ন করতে দোকান বন্ধ করে উপজেলা থেকে জেলা শহরে এসেছি। আসার পর মনিরুল হক বলেন, আজ স্যার নেই। আগামীকাল আসেন। এভাবে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। কাজগপত্র ঠিক নেই বলে আমার কাছ থেকে ফি’র বাইরে দুই হাজার টাকা নিয়েছেন।’
রবিবার দুপুরে মনিরুল হকের সামনে বসে কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করেন জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউছার। সহকারী পরিচালকের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আগে আমরা ঔষধ প্রশাসনে এসে এত কষ্ট পেতাম না। মনিরুল আসার পর থেকে আমাদের ফার্মেসি মালিকরা অসহনীয় কষ্ট করছেন। মনিরুল অতিরিক্ত টাকার জন্য আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ঘুষ ছাড়া কোনও কাজ করেন না। দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।’
জানতে চাইলে জেলা আবু কাউছার বলেন, ‘আমার ভাই লাইসেন্স করতে এসেছিল। তাকে লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা নেন মনিরুল। পরে পরিচয় জানতে পেরে কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘পৌরসভার ভেতরে ব্যাংক ড্রাফসহ লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৭৫ টাকা। পৌরসভার বাইরে এক হাজার ৭২৫ টাকা। কিন্তু আমার কাছে প্রমাণ আছে, ৬০-৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন মনিরুল।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের উচ্চমান সহকারী মনিরুল হক বলেন, ‘মানুষ খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয়। কিন্তু কারও কাছ থেকে জোর করে আমি টাকা নিই না।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘এ বিষয়ে মনিরুল হককে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। এবার লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির তথ্যমতে, ছোট-বড় মিলিয়ে জেলায় সাড়ে ১২ হাজার ফার্মেসি রয়েছে। কুমিল্লা থেকে সপ্তাহে একদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান। এ সুযোগে লাইসেন্স করতে ও নবায়নে ফার্মেসি মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নেন মনিরুল।