ঘূর্ণিঝড়ে চাঁদপুরে ২ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
বাংলাদেশ

ঘূর্ণিঝড়ে চাঁদপুরে ২ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাতে চাঁদপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন ধান, শীতকালীন শাকসবজি, পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা ও গমসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। ঘূর্ণিঝড়ের দুই দিন পর রবিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে জেলার দুই হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘পাঁচ একর জমিতে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, খিরা ও শসা চাষ করেছি। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো ফসলে পচন ধরেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার, আর কীভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

সদর উপজেলার ছোবহানপুর ও বাগাদী গ্রামের কৃষকরা পাকা ধান কেটে শুকানোর জন্য ক্ষেতেই রেখে দিয়েছিলেন। সেসব জমিতে এখন হাঁটুপানি। অনেক জমির পাকা-আধাপাকা ধান ক্ষেতে নুয়ে পড়েছে। এসব এলাকার খাল-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় ক্ষেত থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই।

গত বৃহস্পতিবার পাকা ধান কেটে শুকানোর জন্য ক্ষেতে রেখে দিয়েছিলেন ছোবহানপুর গ্রামের কৃষক মো. হাবিব। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার সারাদিন ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারেননি। রবিবার সকালে ধানগুলো পানি থেকে তুলেছেন হাবিব। তিনি বলেন, ‘পৌনে তিন একর জমিতে আমন আবাদ করেছি। প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অধিকাংশ জমির ধান এখন পানির নিচে। পানি নামার কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই যা পারছি পানির নিচ থেকে তুলছি। না তুললে এসব ধান পচে যাবে।’

বাগাদী গ্রামের কৃষক হাবিব ব্যাপারি ও ওবায়েদ শেখ জানান, তাদের এলাকার অধিকাংশ জমির ধান পানির নিচে। তিন-চার দিন আগে অনেক কৃষক ধান কেটে শুকানোর জন্য ক্ষেতে রেখেছেন। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে তাদের ধানগুলো ক্ষেতেই ডুবে গেছে। এমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ভাবেননি তারা।

একই ক্ষতির কথা জানিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সকদিরামপুর মাঠে দেড় একর জমিতে আমন আবাদ করেছি। তিন দিন আগে কেটে রাখা ধানগুলো এখন শ্রমিক নিয়ে পানি থেকে তুলে উঁচু স্থানে আনতেছি। পানিতে ভিজে যাওয়ায় ওজন বেড়ে গেছে। না তুললে পচে যাবে। তবে কিছু ধান নষ্ট হয়ে গেছে।’

ওই এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা খরচ করে এক একর জমিতে বিআর-২২ ধান আবাদ করেছি। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসে সব ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে। বড় ধরনের লোকসানে পড়বো।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে চাঁদপুরে ৩৩ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে আমন ও শাকসবজির আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু ফসল তোলা হয়েছে। তবে ৩২ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষেতে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে দুই হাজার ৮৫৯ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক হাজার ১১৭ হেক্টর শাকসবজি, ৬২০ হেক্টর রোপা আমন, ৬৫ হেক্টর বোনা আমন, ৯৬ হেক্টর বোরো বীজতলা, ৪২ হেক্টর আলু, ৫৭৫ হেক্টর সরিষা, ১১৩ হেক্টর ভুট্টা, আট হেক্টর গম, সাত হেক্টর পেঁয়াজ, ১৮ হেক্টর মরিচ এবং অন্যান্য ১৯৮ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ঝড়বৃষ্টিতে জেলার পাকা-আধাপাকা রোপা আমান ও শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। তাদের দেওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা সাফায়েত আহম্মদ বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবো। সরকার যদি এখন কৃষকদের প্রণোদনা দেয়, তাহলে তারা পাবেন। তা না হলে পরবর্তীতে কোনও প্রণোদনা এলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।’

Source link

Related posts

সড়কে প্রাণ গেলো মা-মেয়ের

News Desk

ঈদে বুকিং হয়ে গেছে সাজেকের সব রিসোর্ট-কটেজ

News Desk

কোয়ারেন্টিন বাস্তবায়নের দায়িত্ব থেকে সরে গেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

News Desk

Leave a Comment