ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি এলাকার কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বিনষ্ট হয়েছে আমন ধান ও শাকসবজি। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে পড়ায় পুরো উপজেলায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার পরিবার। উপজেলায় কখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে উপজেলার প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৪ হেক্টর জমির শাকসবজি নষ্ট হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপজেলার মীরসরাই ইউনিয়ন, ইছাখালী, দুর্গাপুর, মায়ানী, ওয়াহেদপুর, জোরারগঞ্জ, সাহেরখালী ও ইছাখালীসহ কয়েকটি ইউনিয়নের পাকা ও আধাপাকা আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝোড়ো বাতাসে অনেক ঘরবাড়ির চাল উড়ে গেছে। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। গাছগুলো সরিয়ে চলাচলের রাস্তা উপযোগী করেছেন স্থানীয়রা।
মীরসরাই সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমার ১০ শতকের বেশি জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। কয়েকদিন পরই এসব ধান কাটার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে এমন বিপর্যয় আশা করিনি। জানি না ফসলের কতটুকু ক্ষতি হবে। তবে লোকসানের মুখে পড়তে হতে হবে।’
ইছাখালী ইউনিয়নের কৃষক কৃষ্ণ দে বলেন, ‘ঝোড়ো বাতাসে ১৫ শতকের বেশি জমির ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে। পানিতে এসব ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ৩০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছি। শেষ সময়ে এসে ফসল ঘরে তোলার আগমুহূর্তে ক্ষতির মুখে পড়লাম।’
একই ক্ষতির কথা জানালেন মায়ানী ইউনিয়নের মধ্যম ময়ানী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘৩০ শতক জমিতে ঢ্যাঁড়স করেছি। বৃষ্টিতে সব ঢ্যাঁড়স নষ্ট হয়ে গেছে। আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে।’
মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে উপজেলার ১৫০০ হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। এসব ধান পাকা ও আধাপাকা। কৃষকদের এই ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি, যাতে পানিতে পচে না যায়। যে ধানগুলো এখনও পাকেনি, সেগুলোর কয়েকটি গোছা এক করে বেঁধে দিতে বলেছি চাষিদের। শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে লাল শাক, মুলা শাক, পালং শাকের ক্ষতি হয়েছে। অনেক বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের হিসাব অনুযায়ী, ৪৪ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ পুরোপুরি নিরূপণ করতে পারিনি।’
বিদ্যুতের ১২টি খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় এবং তার ছিঁড়ে পড়ায় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর মীরসরাই জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল (ডিজিএম) ম্যানেজার সাইফুল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। সরবরাহ দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক করতে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের কর্মীরা। তবে স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। যে ১২টি খুঁটি ভেঙেছে, তার মধ্যে দুটি ঠিক করা হয়েছে। বাকিগুলো ঠিক করার চেষ্টা চলছে। ছয়টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, এখনও সেগুলো ঠিক করা যায়নি। কখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তা বলা মুশকিল।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কয়েকটি ঘরবাড়ির টিন উড়ে গেছে। প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে পাঠাতে বলা হয়েছে। তালিকা হাতে এলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হবে।’