Image default
বাংলাদেশ

ঘোড়াঘাটের বাজারে লাল টসটসে লিচু স্বাদ নিয়ে হতাশ ক্রেতারা

মো. লোটাস আহম্মেদ: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজলার বাজার গুলোতে দেখা মিলেছে লাল টসটসে লিচুর। লিচুর রাজ্য হিসেবে খ্যাত উত্তরের বৃহত্তর জেলা দিনাজপুর। দিনাজপুরের লিচু মানেই স্বাদ ও রসে ভরপুর। যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন ব্যস্ত হয়ে উঠছে ঘোড়াঘাটের লিচু চাষী, ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতারা।

তবে আবহাওয়া অনূকুলে না থাকায় চলতি মৌসুমে লিচুর আশানুরুপ ফলন হয়নি এই উপজেলায়। ফলে লোকসানের সংশয়ে রয়েছে লিচু চাষীরা। আবার অধিকাংশ লিচু চাষী অধিক লোকসানের হাত থেকে রক্ষায় অপরিপক্ক লিচুতে বিভিন্ন রাসায়নিক স্প্রে করে সবুজ লিচুকে রঙ্গিন লিচুতে রূপান্তরিত করছে। বাজারে এসব রাসায়নিক যুক্ত অপরিপক্ক লিচু বাজারজাত করা হচ্ছে।

ফলে ঐতিহ্যবাহী দিনাজপুরের লিচুর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ক্রেতারা।লিচু চাষীরা বলছে, গাছে লিচুর ফুল আসার পর থেকে দীর্ঘ সময়ে বৃষ্টির দেখা মেলেনি আকাশে। পাশাপাশি ছিল রোদের প্রখর তাপ। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় আশানুরুপ লিচু ধরেনি গাছে। আবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লিচু পরিপক্ক হবার আগে আগেই ফেটে যাচ্ছে।

ফলে ব্যাপক লোকসানের আশংকায় দিন কাটছে তাদের।উপজেলার লিচু বাগান গুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাগানে চায়না-৩ ও বোম্বাই জাতের লিচুর গাছ রয়েছে। বাগানের বেশ কিছু গাছে লিচুর কোন দেখা মেলেনি চলতি মৌসুমে। যেসব গাছে লিচু ধরেছে, সেটিও তুলনামূলক কম। এসব বাগান থেকে প্রাকৃতিক ভাবে লাল হয়ে লিচু বাজার জাত করতে সময় লাগবে আরো এক সপ্তাহ। তবে পরিপক্ক হবার আগেই লিচু ফেটে যাওয়ায় গাছে বিভিন্ন রাসায়নিক স্প্রে করছে চাষীরা। এসব রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে এক থেকে দুই দিনের ভিতরেই পূর্ণ পরিপক্ক হবার আগেই লিচু লাল রুপ ধারণ করছে।

আর অপরিপক্ক ও রাসায়নিক দ্বারা রঙ্গিন হওয়া লিচু গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারজাত করছে লিচু চাষীরা। ফলে পরিবর্তন হচ্ছে লিচুর স্বাদ। পাশাপাশি পরিবর্তন হচ্ছে লিচুর আকৃতি ও কালার। এসব লিচু বাজার থেকে কিনে নানা ভাবে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা।অধিকাংশ বাগানে বোম্বাই এবং দেশী জাতের লিচু প্রাকৃতিক ভাবেই হালকা লাল রুপ ধারণ করেছে। তবে চায়না-৩ ও মাদ্রাজি সহ অন্যান্য বিদেশী জাতের লিচু পরিপক্ক হতে সময় লাগবে আরো ৫ থেকে ৭ দিন।লিচুর বাজার গুলো ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য বছর লিচুর জমজমাট হাট বসলেও, এই বছর লিচুর ফলন কম হওয়ায় জামজমকপূর্ণ কোন হাট নেই। লিচু ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকান দিয়ে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লিচু বিক্রয় করছে।এসব দোকানে বোম্বাই জাতের লিচু প্রতি ১০০ পিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা দরে।

অপর দিকে দেশী জাতের প্রতি ১০০ পিচ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে। গাইবান্ধা থেকে জয়পুরহাট যাওয়ার পথে ঘোড়াঘাট বাসস্ট্যান্ডে ৩০০ লিচু কেনেন সরকারী চাকুরীজীবী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর। প্রতি বছরই আমি পরিবারের খাওয়ার জন্য অনেক লিচু নিয়ে যাই এই এলাকা থেকে।গত এক সপ্তাহ আগে ঘোড়াঘাটের রানীগঞ্জ বাজার থেকে ২০০ লিচু কিনেছিলাম। তবে অন্যান্য বছরের মত সেই বিখ্যাত লিচুর স্বাদ পাইনি। লিচুর রং লালটসে নয়! ভিতরে রস নেই বললেই চলে। আবার লিচুর ভিতরে গোশতের চেয়ে বিচিই বড়।ঘোড়াঘাট বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন লিচু চাষী রকনু মিয়া বলেন, ৩ বছরের জন্য ঘোড়াঘাট কেসি পাইলট স্কুল কতৃপক্ষের কাছে এই বাগান লিজ নিয়েছি। অধিকাংশ লিচুর গাছে একটি লিচুও ধরেনি।

বাগানে যা লিচু আছে তা দিয়ে লিচুর গাছের পরিচর্যা এবং শ্রমিকদের খরচ উঠবে কিনা সন্দেহ আছে।গাছে যাও লিচু আছে! তা পরিপক্ক হবার আগেই ফেটে যাচ্ছে। কোন ভাবেই লিচুর ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে এই বছর কঠিন লোকসানে পড়তে হবে আমাদের মত ক্ষুদ্র লিচু চাষীদের।প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন খারাপ হয়েছে। সেই সময়ে আকাশে থেকে বৃষ্টি হবার কথা। সেই সময় রোদ্রতাপে মাঠ ফেটে চৌচির। সেচ যন্ত্রের সাহায্য লিচুর পুরো বাগানে পানি দিয়েছি। তবুও কোন লাভ হলো না।ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইখলাছ হোসেন সরকার বলেন, গত বছর পুরো জেলা জুড়েই লিচুর বাম্বার ফলন হয়েছিল। তবে এই বছর তুলনামূলক অনেক কম।

এর একমাত্র কারণ নিয়মিত পরিচর্যা এবং গাছকে পর্যাপ্ত খাদ্য দেওয়া। যা আমাদের চাষীরা করেন না।লিচু ফেটে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাগানে ঠিক ভাবে সেচ না দেওয়ায় গাছের খাদ্য চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। লিচুর গাছের জন্য যেই সময়ে বৃষ্টি হবার প্রয়োজন, সেই সময়ে আকাশে এক ফোঁটাও পানি ছিল না। আবার শেষ সময়ে বৃষ্টি হবার কারণে গাছ অতিরিক্ত পানি শোষণ করায় লিচুর ভেতরের অংশ যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে বাহিরের অংশ বাড়েনি। আর এই কারণেই দাবদাহে লিচু ফেটে যাচ্ছে।

Related posts

পেটের ভেতরে ইয়াবা পাচারকালে মাদক কারবারি গ্রেফতার

News Desk

বিয়ে করতে বরের বাড়িতে কনে

News Desk

দোকানদার ছাড়াই এক দশক ধরে চলছে দোকান

News Desk

Leave a Comment