টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। শুক্রবার (৪ আগস্ট) দিনভর পানিবন্দি ছিল নগরীর বিভিন্ন এলাকার হাজারো পরিবার। পানি প্রবেশ করায় রান্না হয়নি অনেক বাসাবাড়িতে। জরুরি প্রয়োজনেও বাসা থেকে বের হওয়া যায়নি। কেউ বের হলেও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে যেতে হয়েছে গন্তব্যে।
পানি বেশি হওয়ায় নগরীর অধিকাংশ সড়কে বন্ধ ছিল যানবাহন চলাচল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সড়কজুড়ে ছিল রিকশার দাপট। স্বাভাবিক সময়ে ২০ টাকার ভাড়া নেওয়া হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকা। যে কারণে লোকজনকে দিনভর চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়।
শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিকাল ৩টার পর পানি কমতে শুরু করলে যানবাহন চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।
সকালে সরেজমিন বহদ্দারহাট এলাকায় দেখা গেছে, মূল সড়কেই হাঁটু পানি জমে রয়েছে। বহদ্দারহাট এলাকার প্রতিটি অলি-গলিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি দেখা যায়। এ এলাকায় রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন।
সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গিয়ে দেখা গেছে, মেয়রের বাড়ির সামনের সড়কটিতে কোমর সমান পানি জমে আছে। পানি ঢুকেছে বাড়িতেও। বাড়ির উঠানে প্রায় কোমর সমান পানি। ডুবেছে বাড়ির সামনে পার্কিং-এ থাকা গাড়িটি। সকাল থেকে জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েন মেয়রসহ পরিবারের লোকজন। সকাল থেকে মেয়রের বাড়ির দৃশ্য ধারণ করতে যান সাংবাদিকরা। ওই সময় মেয়র বাসায় থাকলেও তিনি সাংবাদিকদের সাক্ষাৎ দেননি। মেয়রের বাড়ির সামনের সড়কে বেশি পানি থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সড়কের দুই পাশের অধিকাংশ বাসাবাড়ির নিচ তলায় পানি ঢুকেছে। এলাকার বাসিন্দারা সকাল থেকে পানিবন্দি বলে সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বহদ্দারহাট ফরিদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মঈন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখানে অধিকাংশ বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকেছে। যে কারণে দুপুরে রান্না হয়নি অনেক পরিবারে। পানি ঢুকেছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি ঢুকেছে চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন পণ্যের গুদামে। নগরীর বাদুরতলা, বাকলিয়া মাস্টার পোল, কমার্স কলেজ এলাকায় বাসা-বাড়িতে। বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে পণ্য।
এ ছাড়া নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর, চকবাজার, ষোলশহর, হালিশহর, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, বলিরহাট, ছোট পুল, বড় পুল, মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, রিয়াজুদ্দিন বাজার, মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন অনেক মানুষ।
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘বৃষ্টিতে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এ বিষয়ে এখনও জানা যায়নি।’
চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান না হওয়ায় নগরবাসীর মাঝে চরম চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলেও মিলছে না সুফল। এর মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। ২০২২ সালে এর ব্যয় বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা করা হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ প্রকল্প হাতে নেয়।
এ প্রকল্পের অধীনে নগরীর ৩৬টি খালের সংস্কার কাজ করার কথা রয়েছে। এর কাজ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
প্রকল্প পরিচালক কর্নেল মো. শাহ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি কাজ চলছে। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল সংস্কারের কথা রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। ৯টির কাজ শেষ পর্যায়ে। বাকি খালগুলোর কাজ করতে সময় লাগবে। এসব খালের জমি অধিগ্রহণ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। যে কারণে কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে।
৩৬ খালের মধ্যে অধিকাংশের মুখে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বাঁধ রয়েছে। যে কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি যোগ হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ বেড়ে যায়। চট্টগ্রামে চার দিন ধরে কখনও থেমে থেমে আবার কখনও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির চতুর্থ দিনে শুক্রবার সকাল থেকে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে গেছে।