চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার: দূর থেকে বন্দিদের সঙ্গে ‘দেখা ও কথা’
বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার: দূর থেকে বন্দিদের সঙ্গে ‘দেখা ও কথা’

দেয়ালের ওপর বসে আবার কখনও মায়ের কাঁধে চড়ে ছোট্ট ইমন তাকিয়ে আছেন দূরের ভবনের জানালার দিকে। জানালার অপর প্রান্তে একটু একটু করে ইমন তার বাবাকে দেখছে। ওই জানালা দিয়ে ভেসে আসছে বাবার গলা ফাটানো কথাও।

ইমন তার বাবাকে বলছে, ‘বাবা, তুমি ভাত খেয়েছো?’ ছোট্ট ইমনের এই আওয়াজ পৌঁছেনি বাবার কান পর্যন্ত। তাই শিশু ইমনের কথাটি বড় কণ্ঠে বললেন দাদি রাবেয়া খাতুন। প্রত্যুত্তরে দেয়ালের ওপাশ থেকে ভেসে আসে, ‘খেয়েছি।’ এর সঙ্গে যোগ করে শিশুটির বাবা বললেন, ‘তুমি খেয়েছো?’ ‘হ্যাঁ, খেয়েছি’ বললো ইমন। দূর থেকে বাবাকে দেখতে পাচ্ছে ইমন। কথাও শোনা যাচ্ছে। এবার বাবার কাছে যাওয়ার আকুতি ইমনের। সঙ্গে থাকা মা এবং দাদি শিশু ইমনকে নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন জেল রোডে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। নগরের আমানত শাহ (রহ.) মাজার থেকে খাতুনগঞ্জের দিকে চলে যাওয়া সড়কটি জেল রোড। জেল রোডের পাশেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। এখান থেকে কারাগারের ৮টি ওয়ার্ডের বন্দিরা জানালা দিয়ে স্বজনদের দেখতে পান। এভাবে কথাও বলেন।

রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘শিশু ইমনের পিতা সোহেল গত এক মাসের বেশি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। নগরীর সদরঘাট থানায় দায়ের করা একটি মারামারির মামলায় তিনি কারাগারে আছেন। ইমন তার বাবাকে দেখতে বাহানা ধরেছে। এ কারণে তাকে নিয়ে জেল রোডে এসেছি।’

তখন শিশু ইমনের মতো আরও অনেক স্বজন বড় গলায় কারাবন্দি প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলছেন।

জেল রোডের মদিনা স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. রহমান বলেন, ‘এখান থেকে কারাগারের কিছু ওয়ার্ডে আটক বন্দিরা জানালা দিয়ে স্বজনদের দেখতে পান। সেজন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনরা এসে বড় গলায় কথা বলেন। আবার অনেকেই ইশারায়ও কথা বলেন। অনেকেই কথা বলতে বলতেই অঝোরে কাঁদেন।’

কারাগারের ১৮ মিটার উঁচু প্যারামিটার ওয়ালের কারণে যমুনা ও হালদা ভবনটির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বন্দি থাকা আসামিদের জেল রোড থেকে দেখা যায় না। তবে ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলার আটটি ওয়ার্ডের বন্দিদের সঙ্গে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের স্বজনদের এভাবেই দেখতে পান, কথা বলেন।

ইশারায় কথা বলেন অনেকে

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৫৭টি বন্দি ওয়ার্ড থাকলেও জেল রোডের পাশে থাকা ওই ৮টিতে থাকার জন্য প্রায় সব বন্দিরাই থাকেন চেষ্টায়। কারণ, এ ৮টি ওয়ার্ড থেকে দূরের সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা চিরচেনা প্রিয় মুখগুলো একনজর দেখা যায়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ এমরান হোসেন মিঞা বলেন, ‘সড়ক থেকে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে কারাগারের যমুনা ও হালদা ভবন। বন্দি ভবনগুলো বহুতল হওয়ায় জানালা দিয়ে দেখা যায়। চিৎকার করে কথা বললে শোনাও যায়। তাই সড়কের ওপর এসে ওই ওয়ার্ডে থাকা বন্দিদের স্বজনরা চিৎকার করে কথা বলা ও দেখা করার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই।’

কথা বলতে বলতেই অঝোরে কাঁদেন কেউ কেউ

কারাগার সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের জন্য বহুতল ভবন আছে ১৫টি। এর মধ্যে, কারাগারের পাশে জেল রোডঘেঁষে রয়েছে হালদা ও যমুনা ভবন। যমুনা ভবনের ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম তলার ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড এবং হালদা ভবনের ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম তলার ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সড়কের লোকজনকে জানালা দিয়ে দেখা যায়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারাগারের কিছু ওয়ার্ড সড়কের পাশ দিয়ে পড়েছে। এ কারণে এসব ওয়ার্ডে থাকা বন্দিরা জানালা দিয়ে সড়কে দাঁড়ানো স্বজনদের দেখতে পান। কথাও বলতে পারেন। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরকে অবহিত করেছি। এসব ওয়ার্ডে আলো-বাতাস ঠিক রেখে বাইরে থেকে যাতে লোকজন দেখা না যায় এর ব্যবস্থা করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাইরে থেকে কথা বললেও নিরাপত্তার জন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কারা ভবনের বাইরে আমাদের নিজস্ব সীমানা দেয়াল আছে। সীমানা দেয়ালের বাইরে সড়ক থেকে লোকজন কথা বলেন। তবে কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী বন্দিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করতে পারেন।’

Source link

Related posts

করোনায় মারা গেলেন অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান

News Desk

গাজীপুর থেকে ঢাকায় শুরু ট্রেন চলাচল

News Desk

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বাংলাদেশের অবস্থা ভারতের মতো হতে পারে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

News Desk

Leave a Comment